ভারতের ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে ক্রমেই সুর চড়াচ্ছে বাংলাদেশের ইসলামিক দলগুলি। এরই মাঝে এবার ওয়াকফ বিরোধিতায় মুখ খুলল বিএনপি। গত ৬ এপ্রিল বাংলাদেশের হেফাজতে ইসলামির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। এরপর হেফাজত নেতাদের সঙ্গে নিয়েই সাংবাদির সম্মেলন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। সেখানেই তিনি বলেন, 'আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে ভারত সরকার পুনর্বিবেচনা করবে বলে আশা প্রকাশ করছে বিএনপি।' তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। এখানে 'আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি' শব্দবন্ধের মাধ্যমে বিএনপি নেতা বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের ওপর 'পালটা প্রতিক্রিয়ার' কোনও প্রচ্ছন্ন হুমকি দিলেন কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। (আরও পড়ুন: বাংলাদেশের লালমনিরহাটে নাকি বিমানঘাঁটি তৈরি করছে চিন, হুমকির মুখে চিকেনস নেক?)
আরও পড়ুন: ওয়াকফ মামলা নিয়ে মৌখিক আবেদন সুপ্রিম কোর্টে, শুনলেনই না প্রধান বিচারপতি
এই বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'ভারত একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সেখানে সকল ধর্মাবলম্বী নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্র অভিভাবকের ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছি। তাই এই আইনটি ভারত সরকার পুনর্বিবেচনা করবে, সেটাই আমরা আশা করছি। আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে এই পদক্ষেপ একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি।' তাঁর দাবি, 'আইনটির বিভিন্ন ধারা বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি যে, ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের অধিকার খর্ব করে তাদের সঙ্গে বৈষ্যমমূলক আচরণের চেষ্টা করা হয়েছে এতে।' (আরও পড়ুন: ওয়াকফ সংশোধনী আইনের সমর্থন করায় BJP-র সংখ্যালঘু নেতার বাড়িতে আগুন লাগানো হল)
আরও পড়ুন: রাখাইনে বৌদ্ধদের খুন করল রোহিঙ্গা জঙ্গিরা, জবাব আরাকান আর্মির, পা উড়ল বাংলদেশির
বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার নিয়ে মহম্মদ ইউনুসকে 'কথা শোনান' নরেন্দ্র মোদী। এদিকে যেদিন ব্যাঙ্ককে মোদী-ইউনুস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, সেদিন প্রায় ভোরেই রাজ্যসভাতে পাশ হয়েছিল ওয়াকফ সংশোধনী বিল। তবে নিজেদের দেশ নিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখে এবার সেই ওয়াকফ বিল নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছে বাংলাদেশের দলগুলি। এর আগে এই নিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আপত্তি জানিয়েছিল। এরই সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে ভারতীয় মুসলমানদের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানায় খেলাফত মজলিস। এদিকে ভারতের সংসদে ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাশ হতেই এর নিন্দায় সরব হয় বাংলাদেশের জামাতে ইসলামির ছাত্র সংগঠন। এই নিয়ে একটি বিবৃতি জারি করে ছাত্রশিবির। (আরও পড়ুন: রামনবমীর মিছিলে ডিম ছোড়ার অভিযোগ মহারাষ্ট্রে, মামলা দায়ের পুলিশের)
প্রসঙ্গত, লোকসভার এবং রাজ্যসভাতে পাশ হয়েছে ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল। রাজ্যসভায় এই বিলটি পাশ করাতে বিজেপির প্রয়োজন ছিল ১১৯টি ভোটের। তারা সেই সংখ্যা থেকে বেশ কিছুটা বেশি ভোটই পায়। ৩৩ ভোটের ব্যবধানে বিলটি পাশ হয় সংসদের উচ্চকক্ষে। এর পক্ষে পড়েছিল ১২৮টি ভোট, বিপক্ষে পড়ে ৯৫টি ভোট। এর আগে লোকসভায় এই বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ২৮৮ জন সাংসদ, বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ২৩২ জন সাংসদ। আর ৪ এপ্রিল রাতে রাষ্ট্রপতি এই বিলে সই করেন। এই আবহে এটি এখন আইনে পরিণত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ওয়াকফের অধীনে ভারতে মোট ৮.৭ লক্ষ সম্পত্তি আছে। ৯.৪ লক্ষ একর জমি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে ওয়াকফ। যার আনুমানিক মূল্য ১.২ লক্ষ কোটি টাকা। দেশে সবচেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি আছে উত্তরপ্রদেশে (২,৩২,৫৪৭, দেশের মোট ওয়াকফ সম্পত্তির ২৭ শতাংশ)। তারপরই তালিকায় আছে পশ্চিমবঙ্গ। রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে মোট ৮০ হাজার ৫৪৮টি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। বাংলায় ওয়াকফ সম্পত্তির ওপরে রয়েছে ১৫৮টি স্কুল, ৪টি মডেল ইংলিশ মিডিয়াম মাদ্রাসা, ১৯টি মুসলিম হস্টেল, ৯টি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বীরভূমে ওয়াকফের জমির ওপরে রয়েছে একটি শপিং কমপ্লেক্সও। তবে এত সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও ভারতে ওয়াকফের বার্ষিক আয় নাকি মাত্র ১৬৩ কোটি টাকা। এই আবহে বিজেপি ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে। এই আবহে ওয়াকফ পরিচালনায় স্বচ্ছতা আনতেই নাকি এই সংশোধনী আইন আনা হয়েছে।