ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন, ২০২৫-এর সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে পিটিশনগুলির জরুরি শুনানির দাবি জানিয়ে মৌখিক ভাবে আবেদন করা হল ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার কাছে। তবে বর্ষীয়ান আইনজীবী এবং রাজ্যসভার সাংসদ কপিল সিব্বলের সেই অনুরোধ গ্রহণ করলেন না প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, 'সুপ্রিম কোর্টে মামলা তালিকাভুক্ত করার শক্তিশালী ব্যবস্থা রয়েছে। তাহলে কেন মৌখিক ভাবে উল্লেখ করা হচ্ছে এই মামলার আবেদন? মামলাগুলি যাতে জরুরি ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত করা হয়, তার জন্য একটি চিঠি পাঠান।' কপিল সিব্বল এরপর জানান, যে চিঠি ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, 'তাহলে আমার সামনে যখন চিঠিটা আসবে, তখন আমি সেটা নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করব।' (আরও পড়ুন: ওয়াকফ সংশোধনী আইনের সমর্থন করায় BJP-র সংখ্যালঘু নেতার বাড়িতে আগুন লাগানো হল)
আরও পড়ুন: গেরুয়া পতাকা হাতে দরগায় উঠল যুবকরা, পুলিশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বার্তা DCP-র
এদিকে কংগ্রেস নেতা তথা অ্যাডভোকেট অভিষেক মনু সিংভিও এই একই ধরনের আবেতন করেছেন। সঙ্গে অ্যাডভোকেট নিজাম পাশাও এই সংক্রান্ত আবেদন করেছেন। প্রধান বিচারপতি অবশ্য প্রোটোকল মেনে মামলার উল্লেখের কথা বলেন তাঁদের দু'জনকেই। তিনি বলেন, আদালত সময় মতো তাঁদের মামলা তালিকাভুক্ত করার আবেদন খতিয়ে দেখবে। (আরও পড়ুন: মোদীর 'কড়া বার্তায়' বদল বাংলাদেশে? ঢাকায় বের হল রামনবমীর বিশাল শোভাযাত্রা)
আরও পড়ুন: পার্কসার্কাসে রামভক্তদের গাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ বিজেপির, কলকাতা পুলিশ বলল…
ইতিমধ্যেই ওয়াকফ নিয়ে এআইএমআইএম প্রধান তথা হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি মামলা করেছেন সুপ্রিম কোর্টে। ওয়াকফ সংশোধনীর বিরুদ্ধে মামলা করেন আপ বিধায়ক আমানাতুল্লাহ খান। এর আগে কংগ্রেস জানিয়েছিল, শীঘ্রই ওয়াকফ সংশোধনী আইনের সাংবিধানিকতাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করবে। এদিকে এর আগে এই ওয়াকফ সংশোধনীর বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে মামলা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ডিএমকে। (আরও পড়ুন: কানপুরে রামনবমীর মিছিলে DJ আটকে 'জুতো খেল' পুলিশ, শোভাযাত্রা 'বয়কট' বহু আয়োজকের)
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে হিন্দু মহিলার দেহ টুকরো-টুকরো করে কার্টনে ভরে ফেলে আসা হল রাস্তার পাশে
প্রসঙ্গত, লোকসভার এবং রাজ্যসভাতে পাশ হয়েছে ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল। রাজ্যসভায় এই বিলটি পাশ করাতে বিজেপির প্রয়োজন ছিল ১১৯টি ভোটের। তারা সেই সংখ্যা থেকে বেশ কিছুটা বেশি ভোটই পায়। ৩৩ ভোটের ব্যবধানে বিলটি পাশ হয় সংসদের উচ্চকক্ষে। এর পক্ষে পড়েছিল ১২৮টি ভোট, বিপক্ষে পড়ে ৯৫টি ভোট। এর আগে লোকসভায় এই বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ২৮৮ জন সাংসদ, বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ২৩২ জন সাংসদ। আর ৪ এপ্রিল রাতে রাষ্ট্রপতি এই বিলে সই করেন। এই আবহে এটি এখন আইনে পরিণত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ওয়াকফের অধীনে ভারতে মোট ৮.৭ লক্ষ সম্পত্তি আছে। ৯.৪ লক্ষ একর জমি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে ওয়াকফ। যার আনুমানিক মূল্য ১.২ লক্ষ কোটি টাকা। দেশে সবচেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি আছে উত্তরপ্রদেশে (২,৩২,৫৪৭, দেশের মোট ওয়াকফ সম্পত্তির ২৭ শতাংশ)। তারপরই তালিকায় আছে পশ্চিমবঙ্গ। রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে মোট ৮০ হাজার ৫৪৮টি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। বাংলায় ওয়াকফ সম্পত্তির ওপরে রয়েছে ১৫৮টি স্কুল, ৪টি মডেল ইংলিশ মিডিয়াম মাদ্রাসা, ১৯টি মুসলিম হস্টেল, ৯টি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বীরভূমে ওয়াকফের জমির ওপরে রয়েছে একটি শপিং কমপ্লেক্সও। তবে এত সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও ভারতে ওয়াকফের বার্ষিক আয় নাকি মাত্র ১৬৩ কোটি টাকা। এই আবহে বিজেপি ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে। এই আবহে ওয়াকফ পরিচালনায় স্বচ্ছতা আনতেই নাকি এই সংশোধনী আইন আনা হয়েছে।