থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কোনও পরিকল্পনা নেই। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। ইতিমধ্যে ব্যাঙ্ককে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে মোদীর বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে আশা প্রকাশ করেছে ঢাকা। তার মধ্যে বিদেশ মন্ত্রকের এই বক্তব্যে সিঁদুরে মেঘ দেখছে বাংলাদেশ প্রশাসন।
ঘটনাচক্রে, ইউনুসের চিন সফরের সময়ই এই বার্তা দেওয়া হয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে। যা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সমীকরণের দিকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বেজিং থেকে ঢাকায় ফিরেই ইউনুস ব্যাঙ্ককে যাবেন বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে। আগামী ২ থেকে ৪ এপ্রিলের ওই সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী মোদীও। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, ব্যাঙ্ককে মোদীর সঙ্গে পার্শ্ববৈঠকে বসার ইচ্ছাপ্রকাশ করে বার্তা পাঠিয়েছিলেন ইউনুস। কিন্তু সম্ভবত তাতে সাড়া দিচ্ছে না নয়া দিল্লি।শুক্রবার বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের সময় প্রধানমন্ত্রী মোদীর কোনও দ্বিপাক্ষিক কর্মসূচিতে যোগদানের পরিকল্পনা নেই।
এদিকে, গত বুধবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস চার দিনের সফরে চিনে গিয়েছেন। শুক্রবার সকালে বেজিংয়ে জিনপিংয়ের সঙ্গে ইউনুসের বৈঠক হয়। শান্তি, সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় আরও জোরালো ভূমিকা পালন করার জন্য চিনকে আহ্বান জানিয়েছেন ইউনূস। তাঁদের আলোচনায় উঠে এসেছে রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রসঙ্গ।ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘চিনের উৎপাদন সংস্থাগুলিকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার বিষয়েও জিনপিং কথা দিয়েছেন। চিন থেকে নেওয়া ঋণে সুদের হার কমানো থেকে শুরু করে জলসম্পদ বণ্টন- একাধিক বিষয়েই জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। বাংলাদেশ যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি তুলে ধরেছে, চিন তা বিবেচনা করে দেখবে।’
এর আগে বাংলাদেশের বিদেশসচিব মো. জসীম উদ্দিন বলেছিলেন, ‘বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকের জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ। এই বৈঠক নিয়ে ভারতের দিক থেকে ইতিবাচক উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে ঢাকা। আমাদের দিক থেকে বলতে পারি, আমরা এই বৈঠকের জন্য প্রস্তুত আছি। ভারতের দিক থেকে আমরা একটা ইতিবাচক উত্তরের অপেক্ষায় আছি।’ পাশাপাশি ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ব্যাঙ্ককেবিমসটেকের শীর্ষ সম্মেলনের সময় মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করতে চান ইউনুস। সেই সঙ্গে মুখ্য উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরের জন্য ইউনূসের চিনকে বেছে নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘চিন সফর চূড়ান্ত করার অনেক আগে প্রধান উপদেষ্টা ভারতে যেতে চেয়েছিলেন। সেই ইচ্ছা প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকার গত ডিসেম্বরেই ভারতকে বার্তা পাঠিয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ভারত থেকে ইতিবাচক কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।’ কিন্তু এবারও সম্ভবত নয়াদিল্লি থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছে না ঢাকা।
গত বছর ৫ অগস্ট মাসে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ ছাড়েন। পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। সেই থেকে হাসিনা ভারতে গোপন আস্তানায় রয়েছেন। বাংলাদেশে সরকারে পালাবদল হয়। সেই থেকে আওয়ামী লীগ নেত্রীর ভারতে থাকা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পদাধিকারীরা নয়া দিল্লিকে নিশানা করেছেন। ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারই এখনও বাংলাদেশের শাসনভার সামলাচ্ছে। তবে ওপার বাংলায় পালাবদলের পর ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের সমীকরণও পাল্টেছে। যদিও এখনও পর্যন্ত মোদী-ইউনুসের মুখোমুখি কোনও বৈঠক হয়নি। বরং বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ধারাবাহিক ঘটনা নয়া দিল্লি-ঢাকা টানাপড়েনের অনুঘটক হয়েছে। তাই ব্যাঙ্ককে মোদী-ইউনূস বৈঠক বাস্তবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে কূটনীতিকদের অনেকের মনেই।