'মেজর সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণন ২৬/১১ মুম্বই হামলার শিকার হননি। বরং কর্তব্য পালন করেছিলেন তিনি।' এনডিটিভি-র সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন শহিদ মেজরের গর্বিত বাবা কে উন্নিকৃষ্ণন। দিনটা ছিল ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর। জঙ্গিরা কব্জা করে নেয় মুম্বইয়ের তাজ হোটেল, ওবেরয় ট্রাইডেন্ট হাউস, কামা হাসপাতাল এবং নরিমান হাউস। মানুষকে করে দেওয়া হয় বন্দি, সঙ্গে লাগাতার গুলিবৃষ্টি। সন্ত্রাসী আক্রমণ ঠেকাতে নামানো হয় সেনা, পুলিশ। মুম্বইয়ে সন্ত্রাসী হামলায় শহিদ হয়েছিলেন সিকিউরিটি গার্ড কমান্ডো মেজর সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণন। মেজর সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণন সেই ভয়ঙ্কর রাতে মুম্বইয়ের তাজ প্যালেস হোটেলকে সন্ত্রাসী মুক্ত করার জন্য এনএসজি কম্যান্ডোদের একটি দলের হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। সেখানেই গুলিতে মৃত্যু হয় তাঁর। এই বীরত্বের জন্য ২০০৯ সালে ২৬ জানুয়ারি দেশের সর্বোচ্চ শান্তিকালীন বীরত্ব পুরস্কার অশোক চক্রে ভূষিত হন সন্দীপ।
বৃহস্পতিবারই দেশে ফিরছে ২৬/১১ মুম্বই হামলায় অন্যতম চক্রী তাহাউর রানাকে।তাঁর নিরাপত্তার জন্য দিল্লি পুলিশের বিশেষ সেলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।এই আবহে সেই ভয়ঙ্কর দিনের স্মৃতি উস্কে এনডিটিভি -কে মেজর সন্দীপের বাবা কে উন্নিকৃষ্ণন বলেন, 'দীর্ঘ প্রতীক্ষিত রানার ভারতে প্রত্যর্পণ কেবল কূটনৈতিক সাফল্যই নয়, সাধারণ মানুষের জন্য প্রতিশোধও বটে। আমরা অপরাধীকে ধরতে পারি। তবে রানার প্রত্যর্পণ কোনও সমাধানের পথ নয়।' তিনি আরও বলেন, 'সন্দীপ ২৬/১১-এর শিকার হয়নি। বরং সে একজন নিরাপত্তা রক্ষী ছিল, যে নিশ্চিত মৃত্যুর কথা জেনেও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছিল। সন্দীপ নিশ্চিত ছিল যে সে আর ফিরে আসবেন না। যদি সে মুম্বইয়ে এটা না করতেন, তাহলে অন্য কোথাও করত।' কে উন্নিকৃষ্ণনের কথায়, 'আমাদের মূল চিন্তা হওয়া উচিত এই ধরনের আক্রমণ প্রতিরোধ করা। যারা আমাদের ক্ষতি চাইছে তাদের আটকানো।'
রানার প্রত্যাবর্তনে ১৬৬ জন নিহতের পরিবারের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কে উন্নিকৃষ্ণন বলেন, 'এটি কোনও সমাধান নয়। আমাদের কোলম্যান হেডলিকে ধরতে হবে। এগুলো সবই হাতিয়ার, এরা টাকার জন্য কাজ করছে। আমাদের পাড়ার কিছু সংস্থার নির্দেশে লোকেরা কাজ করেছিল। কিন্তু এর পেছনের যে মাথা, আমরা এখনও তাদের ধরতে পারিনি সবকিছু প্রমাণ করার পরেও। তবে এটি অবশ্যই একটি বড় সাফল্য, যদিও দেরি হয়ে গিয়েছে। এবং আমি আশা করি সকলেই শাস্তি পাবে।' একই সঙ্গে তিনি আশাবাদী যে, এনআইএ রানাকে নিয়ে প্রতিটি বিষয় খতিয়ে দেখবে। তাঁর কথায়, 'এ (রানা) একজন শিক্ষিত মানুষ। এনআইএ-র কাছে সমস্ত তথ্য রয়েছে, তারা কেবল তার জন্য অপেক্ষা করছিল। দেখা যাক এর থেকে কী বেরিয়ে আসে।'
২৬/১১ ভারতের ইতিহাসে এক কালো দিন। সন্ত্রাসবাদীরা যখন তাজ হোটেলে হামলা চালাচ্ছিল তখন একত্রিশ বছর বয়সি মেজর সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণন ১০ জন কমান্ডোর একটি দলকে নিয়ে হোটেলে যান। উভয় পক্ষের মধ্যেই গুলিবর্ষণ হয়। সন্ত্রাসীদের গুলিতে এনসিসি দলের অনেকে আহত হন। মেজর সন্দীপ তাঁর আহত সহকর্মীদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন একাই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন।হোটেলের উত্তর প্রান্তে সন্দীপ সন্ত্রাসীদের কোণঠাসা করতে সক্ষমও হন, কিন্তু নিজে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হন। মেজরের সহকর্মীরা বলেছিলেন অসমসাহসী বীর ভারত সন্তানের শেষ কথা ছিল, 'উপরে এসো না, আমি ওদের সামলে নেব।'