রাশিয়ার মাটিতে ইউক্রেনের 'অপারেশন স্পাইডার্স ওয়েব'। আর তাতেই চমকে উঠেছে গোটা বিশ্ব। রাশিয়ার অভ্যন্তরে সীমান্ত থেকে প্রায় ৪,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। রাশিয়ার ৫টি এয়ারবেসকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়। রাশিয়ার ৪১টি পারমাণবিক বোমারু বিমান ও যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে দিয়েছে ইউক্রেনে।আর এই হামলার নেপথ্যে রয়েছেন প্রাক্তন ইউক্রেনীয় ডিজে এবং তাঁর স্ত্রী।
নিউ ইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, ৩৭ বছর বয়সী আর্টেমি একজন প্রাক্তন ইউক্রেনীয় ডিজে।পরে তিনি রাশিয়ায় এসে বসবাস শুরু করেন। গোয়েন্দাদের ধারণা, হামলায় কাঠের জিনিসপত্র পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত ট্রাকগুলির মালিক ছিলেন তিনি।মনে হচ্ছে তারা ভেবেছিল কাঠের কুঁড়েঘর পরিবহন করছে, কিন্তু পরিবর্তে তারা কামিকাজে ড্রোনগুলিকে এয়ারবেসে নিয়ে গিয়েছিল। একজন রুশপন্থী ব্লগার বলেছেন, 'ইরকুটস্ক অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আর্টেমিকে এখন খুঁজছে।' তার নামে চারটি ট্রাক নথিভুক্ত ছিল এবং এরমধ্যে একটি ছিল (বিমানঘাঁটিতে হামলায়) উৎক্ষেপণ করা ড্রোনগুলির উৎস।
আর্টেমের স্ত্রী, একাতেরিনা টিমোফিভাও তাকে সাহায্য করেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।একাতেরিনা উস্কানিমূলক 'আই বেকম ব্যাড হোয়াইল ইউ লাভড মি' উপন্যাসের লেখক। সপ্তাহ আগেও চেলিয়াবিনস্কের একটি অ্যাপার্টমেন্টকে এই দম্পতিকে দেখা গিয়েছিল বলে জানা গেছে।কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে আর্টেমের স্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়া থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছেন। সক্রিয় অ্যাকাউন্টগুলি মুছে ফেলেছেন।মনে করা হচ্ছে, তাঁরা সম্ভবত রাশিয়ার বাইরে চলে গেছেন। কারণ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন যে অভিযানের সঙ্গে জড়িত সকলকে বের করে আনা হয়েছে।
সূত্রের খবর, আর্টেম বেশ কয়েক বছর আগে রাশিয়ার চেলিয়াবিনস্ক শহরে চলে আসেন এবং একজন ব্যবসায়ী হিসেবে কাজ করতেন।ডিসেম্বরে তিনি একটি পরিবহন ব্যবসা শুরু করেছিলেন। আর তারপরেই রাশিয়ার মাটিতে এই বড় আক্রমণ চালাল ইউক্রেন। ইউক্রেন বলেছে যে, মাত্র ১১৭টি ড্রোনের কারণে রাশিয়ার ৭ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। ইউক্রেনীয় গুপ্তচররা এই পরিকল্পনাটি কার্যকর করতে ১৮ মাস সময় নিয়েছে।
ফার্স্ট-পারসন-ভিউ এই ড্রোনগুলি একটি কাঠের বাক্সের ভিতর লুকিয়ে রাশিয়ার সামরিক বিমানঘাঁটিগুলির কাছে পার্ক করা ট্রাকের উপর বসানো ছিল। তারপর রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে এগুলি অপারেট করা হয়। রাশিয়ার এয়ারবেস ও বোমারু এবং যুদ্ধবিমানের উপর ইউক্রেনের এই হামলাকে বলা হচ্ছে 'মর্ডান পার্ল হারবার'। ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় নৌসেনা বন্দর পার্ল হারবারে জাপান আকস্মিক আক্রমণ করে। যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত বড় যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন ছিল পার্ল হারবারে। পাল্টা জাপান কমপক্ষে ৮টি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ডুবিয়ে দেয়।সেইসঙ্গে ৩টি ক্রুজার, ৩টি ডেস্ট্রয়ার এবং ১৮৮টি বিমান ধ্বংস করে। মোট ২৪০০ জনেরও বেশি মার্কিন সেনা মারা যায়। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র জাপানকে ধ্বংস করার শপথ নেয়। এরপরই জাপানকে আত্মসমর্পণ করাতে হিরোশিমা-নাগাসাকিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু বোমা নিক্ষেপ।