বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে অতিরিক্ত বিল নেওয়ার অভিযোগ নতুন কিছু নয়। রোগীর পরিবারের অজান্তেই অনেক সময় চিকিৎসার নামে বাড়তি টাকা দাবি করা হয়। এই প্রবণতা বন্ধ করতে আগেই এই নিয়ে বিল আনার কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। অবশেষে বিধানসভায় পেশ হল এই সংক্রান্ত বিল। সোমবার বিধানসভায় পেশ করা ‘দি ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট (সংশোধনী) বিল, ২০২৫’।
আরও পড়ুন: বেসরকারি হাসপাতালের বিল নিয়ে বাড়ছে অভিযোগ, আইন সংশোধন করতে চলেছে রাজ্য
এই বিল অনুযায়ী, রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম এবং ক্লিনিকগুলিকে তাদের পরিষেবার জন্য নির্ধারিত প্যাকেজ খরচ স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। সেই তালিকা সাধারণ মানুষের নজরে পড়ার জন্য দৃশ্যমান স্থানে রাখতে হবে, যাতে কেউ বিভ্রান্ত না হন। বাংলার পাশাপাশি অন্যান্য ভাষাতেও সেই তালিকা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বিলে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল নির্ধারিত প্যাকেজের বাইরে কোনও অতিরিক্ত খরচ রোগীর পরিবারকে না জানিয়ে নেওয়া যাবে না। যদি চিকিৎসার পরিস্থিতি বদলায় এবং বাড়তি খরচের প্রয়োজন হয়, তবে তা আগেভাগে জানিয়ে অনুমতি নিতে হবে। একইসঙ্গে ক্লিনিক্যাল তথ্য প্রতিদিন সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার দিকেও জোর দেওয়া হয়েছে।
বিল পেশের সময় উঠে আসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য। তিনি বারবার বলেছেন, ‘সেবা বিক্রি করা যায় না।’ সেই ভাবনা থেকেই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এই বিল আনা হয়েছে বলে বিধানসভায় দাবি করেন তৃণমূল বিধায়ক তথা চিকিৎসক রানা চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, এই বিল রোগী ও হাসপাতালের মধ্যে বিশ্বাস এবং স্বচ্ছতা তৈরি করবে। চিকিৎসা ব্যবসা নয়, এটা সেবা, এই বার্তা স্পষ্ট দিচ্ছে সরকার।
তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব সরকার বলেন, রোগীর পরিবারের অজান্তে যেন কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়। এমনকি ভর্তি থাকা কোনও রোগীর ক্ষেত্রে প্রতিদিন অন্তত একবার যেন পরিবারের হাতে বিলের তুলে দেওয়া হয়, সেটাও নিশ্চিত করা উচিত।
যদিও বিজেপির কোনও বিধায়ক এই বিল নিয়ে আলোচনায় অংশ নেননি। তবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে একাধিক বিধায়ক সরকারের এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানান। বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী ও রফিকুল ইসলাম মণ্ডল রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। তাঁদের মতে, স্বাস্থ্য পরিষেবায় স্বচ্ছতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির বার্তা দিতেই রাজ্য সরকার এই সংশোধনী বিল এনেছে।