কলকাতার নয়া পুলিশ কমিশনার হলেন মনোজকুমার বর্মা। আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনে দু'জনকে সরানোর পাশাপাশি আরও কয়েকটি পদে রদবদল করা হয়েছে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদে যিনি ছিলেন, সেই বিনীত গোয়েলকে কোন পদে পাঠানো হল?
জুনিয়র ডাক্তারদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি মতো পুলিশের একাধিক পদে রদবদল করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (ছবি সৌজন্যে, সমীর জানা/হিন্দুস্তান টাইমস)
কলকাতার নয়া পুলিশ কমিশনার হলেন ‘ক্রাইসিস ম্যান’ মনোজকুমার বর্মা। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে ধর্ষণ এবং খুনের মামলার শুনানির পরেই নবান্নের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে যে বিনীত গোয়েলের পরে কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদে ১৯৯৮ ব্যাচের আইপিএস অফিসার মনোজকে বসানো হচ্ছে। এতদিন যিনি কলকাতার পুলিশ কমিশনার ছিলেন, সেই বিনীতকে পশ্চিমবঙ্গের এসটিএফে এডিজি করা হল। যা তাঁর চেনা জায়গা। কারণ আগেও এসটিএফে কাজ করেছেন। অন্যদিকে, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আন্দোলনের আবহেই পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ইনটেলিজেন্স ব্র্যাঞ্চেও রদবদল করা হয়েছে। সরিয়ে দেওয়া হয়েছে জাভেদ শামিমকে। কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (নর্থ) অভিষেক গুপ্তাকে কার্যত গুরুত্বহীন পদে পাঠিয়ে দিয়েছে নবান্ন। আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনে দু'জনকে সরানোর পাশাপাশি আরও কয়েকটি পদে রদবদল করা হয়েছে।
পুলিশের কোন কোন পদে রদবদল করা হল?
১) বিনীত গোয়েল: কলকাতার পুলিশ কমিশনার আছেন। তাঁকে এডিজি (এসটিএফ) করা হচ্ছে।
২) জ্ঞানবন্ত সিং: ডিরেক্টরেট অফ ইকোনমিক অফেন্সের ডিরেক্টর পদে আছেন। তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ইনটেলিজেন্স ব্র্যাঞ্চের এডিজি করা হয়েছে।
৩) জাভেদ শামিম: তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ইনটেলিজেন্স ব্র্যাঞ্চের এডিজির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) পদে বসানো হল। যা রাজ্য পুলিশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ।
৪) মনোজকুমার বর্মা: জাভেদ শামিমকে যে পদে পাঠানো হচ্ছে, সেই পদে ছিলেন মনোজকুমার বর্মা। তাঁকে কলকাতার পুলিশ কমিশনার করা হল।
৫) ত্রিপুরারী অথর্ব: যে পদে বিনীতকে পাঠানো হয়েছে, আপাতত সেই পদে আছেন তিনি। তাঁকে ডিরেক্টরেট অফ ইকোনমিক অফেন্সের ডিরেক্টর পদে পাঠানো হল।
৬) অভিষেক গুপ্তা: কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (নর্থ) পদে ছিলেন। তাঁকে যে পদে পাঠানো হয়েছে, সেটাকে ‘পানিশমেন্ট পোস্টিং’ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন অনেকে। তাঁকে ইএফআরের সেকেন্ড ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডাট পদে সরিয়ে দেওয়া হল।
৭) দীপক সরকার: শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (ইস্ট) পদে আছেন। তাঁকে কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (নর্থ) পদে আনা হল।
যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে কলকাতার পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে চলেছেন মনোজ। ১৯৯৩ ব্যাচের আইপিএস অফিসার পীযূষ পান্ডে এবং ১৯৯৭ ব্যাচের আইপিএস অফিসার সুপ্রতিম সরকারের মতো অফিসার দৌড়ে থাকলেও মনোজের উপরে আস্থা রেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি অতীতে মাওবাদীদের ‘ঠান্ডা’ করেছেন। ‘ঠান্ডা’ করেছেন ব্যারাকপুরকে।
কোন কোন চ্যালেঞ্জ আছে মনোজের সামনে?
প্রথমত, আরজি কর কাণ্ডে যেভাবে টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা নিয়ে পুলিশের নীচু মহলের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে বলে একটি মহলের তরফে দাবি করা হয়েছে। ওই মহলের বক্তব্য, আরজি কর কাণ্ডের সময় পুলিশ কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার (নর্থ)-র মতো সিনিয়র আইপিএস অফিসাররা ছিলেন। অথচ তদন্তে গাফিলতির অভিযোগে নেহাতই একজন ওসিকে গ্রেফতার করা হল। মনোজকে সেই ক্ষোভ সামলাতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের মতে।