খিদিরপুর বাজারে অগ্নিকাণ্ডের পরে ঘটনাস্থলে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এক ব্যক্তির কার্যত তর্কাতর্কি বেঁধে গেল। গলা উঁচিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে রীতিমতো চোটপাট করেন ওই ব্যক্তি। প্রাথমিকভাবে একেবারে শান্তভাবে কথা বলছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাতেও ওই ব্যক্তি চোটপাট করতে থাকায় কিছুটা রেগে যান মমতা। তারইমধ্যে ওই ব্যক্তিকে চুপ করতে এবং শান্ত হতে বলেন স্থানীয় কাউন্সিলর দেবলীনা বিশ্বাস। তবে তাতেও থামেননি। শেষপর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী শান্তভাবেই পুরো বিষয়টি সামলে নেন। সেইসঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, সরকারের তরফে নতুন করে বাজার তৈরি করা হবে। ততদিন নয়া জায়গায় অস্থায়ীভাবে দোকানদাররা বসবেন। তারপর নয়া বাজার যখন তৈরি করা হবে, তখন তাঁদের পুরনো জায়গায় ফিরিয়ে আনা হবে। সেজন্য দোকানদারদের কোনও টাকা খরচ করতে হবে না। পুরো কাজটাই করবে রাজ্য সরকার। আর আপাতত যাঁদের দোকান পুরোপুরি ভষ্মীভূত হয়ে গিয়েছে, তাঁদের এক লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। যাঁদের দোকান আংশিকভাবে পুড়ে গিয়েছে, তাঁদের দেওয়া হবে ৫০,০০০ টাকা। অস্থায়ী জায়গায় যখন দোকানদাররা সরে যাবেন, তখনই সেই টাকা মিলবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতার সঙ্গে ওই ব্যক্তির কী কথা হয়েছে?
আর সেই বিষয়গুলিই যখন ঘোষণা করছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, তখনই এক ব্যক্তি তাঁকে প্রশ্ন করেন। শুরুতে শান্তভাবেই ওই ব্যক্তি কথা বলছিলেন। পরে কার্যত চোটপাট করতে শুরু করে দেন।
ব্যক্তি: এখন আমার বয়স ৮২ বছর। তাহলে তার সংসার কীভােবে চলবে?
মুখ্যমন্ত্রী: ভাই, দোকানে তো আমরা এসে লাগিয়ে দিয়ে যাইনি। তোমাদের নিজেদের অব্যবস্থাপনার জন্য আগুন লেগেছে। এখন সরকার যেটা করতে পারে, (সেটাই করবে)। সরকার নয়া বাজার করে দেবে। বিনা পয়সায় বাজার করে দেবে। তোমাদের পয়সা লাগবে না। যার জন্য তোমরা চিন্তা করছো। যতক্ষণ না নয়া বাজার তৈরি করছে, ততক্ষণ যাঁদের যা যা আছে, তা নিয়ে অস্থায়ী বাজারে….(মুখ্যমন্ত্রীর কথা শেষ করার আগেই ওই ব্যক্তি বলতে থাকেন….)
আরও পড়ুন: ‘বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে’ শ্রমিকদের পুশব্যাক নিয়ে সরব মমতা
ব্যক্তি: যাদের দোকান পুড়ে গিয়েছে, তাদের ছয় মাস সংসারটা চলবে কীভাবে?
মুখ্যমন্ত্রী: তুমি অস্থায়ী দোকান করছো তো।
ব্যক্তি: কে?
মুখ্যমন্ত্রী: তোমাদের তো একটা জায়গায় অস্থায়ী দোকান করে দেওয়া হচ্ছে।
ব্যক্তি: করতে কতদিন লাগবে? ছয় মাস লাগবে?
মুখ্যমন্ত্রী: কে বলেছে তোমায়?
ব্যক্তি: আমি বলছি। ৩ মাস লাগবে?
মুখ্যমন্ত্রী: তুমি সব ঠিক করবে?
ব্যক্তি: তিন মাস সংসারটা কীভাবে চলবে?
মুখ্যমন্ত্রী: কে ভাই তুমি?
ব্যক্তি: তিনটে দোকান চলে গিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী: সো হোয়াট? তোমার দোকানে যে আগুন লেগেছে, সেটা নিয়ে আমরা তো সহানুভূতিশীল।
ব্যক্তি: হ্যাঁ।
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে হট্টগোল বিজেপি বিধায়কদের, খোঁচা মমতার, সাসপেন্ড মনোজ ওঁরাও
স্পষ্টভাবে নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন মমতা
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে অস্থায়ী দোকানে যাওয়ার পরে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। সম্ভবত ওই ব্যক্তি এখনই টাকা দেওয়ার জন্যই তর্কাতর্কি জুড়ে দেন বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। তবে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে তদন্ত করা হবে। আর অস্থায়ী জায়গায় গেলে তবেই টাকা মিলবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: ‘আমি পাঁচটি প্রশ্ন রাখছি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে’, অভিষেকের কড়া পঞ্চবাণ এক্স হ্যান্ডেলে
ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে খিদিরপুর বাজার
এমনিতে গত রাতে খিদিরপুর বাজারে যে বিধ্বংসী আগুন লেগেছে, তা নিয়ে অসন্তোষের মুখে পড়েন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুও। তার জেরে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে বাজারের প্রায় ৪০০টি দোকানই। কীভাবে আগুন লেগেছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।