আর্থিক অসঙ্গতির জেরে অনেকে পড়াশোনা করতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়ে ওঠে না। ফলে মনের ইচ্ছার বাস্তব রূপায়ণ ঘটে না। দ্বাদশ শ্রেণিতে ‘ফেল’ করেছিলেন এক ছাত্র। তারপরও হেরে যায়নি সে। কঠিন লড়াই করে আইপিএস হয়েছেন। এই ঘটনা শুনে অনেকের গল্প বলে মনে হতে পারে। আসলে এটাই সত্য। আর এই সত্য ঘটনার কথা জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপারের মুখে শুনে এক ছাত্রী হলঘরের শেষ আসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিল, ‘স্যার, আমিও পড়াশোনা করতে চাই।’ আর তাতেই কিছু একটা করার তাগিদ জন্মায় পুলিশ কর্তার হৃদয়ে। এই অসঙ্গতিপূর্ণ ছাত্রছাত্রীদের জন্য তিনি নানা সাহায্য করলেও তা যথেষ্ট ছিল না।
আর ওই ছাত্রীকে পড়াশোনা করানোর আর্থিক সঙ্গতি ছিল না পরিবারের। এই গোটা বিষয়টি সংবাদপত্রে পড়েন আইআইটি খড়গপুরের প্রাক্তনী এবং সল্টলেক এলাকার বাসিন্দা রতিকান্ত ঘোষ। পাঁচ মাস আগের সেই অনুষ্ঠানের খবর সংবাদপত্রে পড়েছিলেন রতিকান্ত ঘোষ। তার পরই ওই প্রাক্তনী যোগাযোগ করেন জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সুপার উমেশ গণপত খণ্ডবহালের সঙ্গে। তখন দু’পক্ষের মধ্যে কথা হয় বিষয়টি নিয়ে। জানতে চান পুলিশের কাছে মেয়েটির বিষয়ে। পুলিশ কর্তাও তথ্য দেন রতিকান্তবাবুকে।
আরও পড়ুন: দেউলটি স্টেশনে রেল অবরোধ, হাওড়া–খড়গপুর শাখায় ব্যাহত ট্রেন চলাচল, বৃষ্টিতে ভোগান্তি
পুলিশকর্তার মুখ থেকে সব কথা শুনে রতিকান্ত ঘোষ প্রস্তাব দেন, দুঃস্থ পড়ুয়াদের জন্য তিনি কিছু করতে চান। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তখন পাঁচজন পড়ুয়ার বিবরণ পাঠায় পেশায় ইঞ্জিনিয়ার তথা বেসরকারি সংস্থার কর্ণধার রতিকান্ত ঘোষকে। তিন মাস হল প্রত্যেক পড়ুয়াকে দেড় হাজার টাকা করে পাঠাচ্ছেন আইআইটি’র প্রাক্তনী রতিকান্ত ঘোষ। এবার জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ রতিকান্ত ঘোষকে আমন্ত্রণ করলেন জলপাইগুড়িতে আসার জন্য। তাতে তিনি রাজি হন আর আসেন জলপাইগুড়িতে। মেতে ওঠেন আনন্দে।
গতকাল শুক্রবার জলপাইগুড়িতে এসেছিলেন রতিকান্ত ঘোষ। তিস্তা উদ্যানে পাঁচ দুঃস্থ পড়ুয়া এবং তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখাও করে গেলেন। আর পড়ুয়াদের বললেন, ‘কোনও অসুবিধা–সমস্যা হলে জানাবে। তোমরা জীবনে পড়াশোনা করে যেদিন নিজের পায়ে দাঁড়াবে সেটাই হবে আমার কাছে সবচেয়ে বড় উপহার। সবসময় সৎ থেকো। যাকে ইচ্ছে চিঠি লিখো। কারণ চিঠিতে মনের কথা জানানো যায়।’ পুলিশ সুপার এই ঘটনা দেখে বলেন, ‘আন্তরিকতার সঙ্গে নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকো। সাফল্য আসবেই। বিশ্বটা তোমাদের মতো, আমাদের মতো সবার জন্যই।’