স্ত্রী এবং তিন মেয়েকে নিয়ে হাদিপুরে থাকেন ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান। আসাদুজ্জামানের ফুলের ব্যবসার দৌলতে বিয়েবাড়িতে ফুল দেন তিনি। আবার পুতুলও বিক্রি করেন। তাঁর অ্যান্টিক জিনিসপত্র সংগ্রহের নেশা থেকেই ছলে–বলে–কৌশলে এইসব জোগাড় করেছিলেন। যে খবর গোপনে চলে এসেছিল বিপ্লববাবুর কাছে।
পশ্চিমবঙ্গের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জেনারেল অ্যান্ড অফিসিয়াল ট্রাস্টি বিপ্লব রায়।
ক্রেতা সেজে অভিযান। তারপর দেগঙ্গা থেকে লুকনো ‘প্রত্নতত্ত্ব’ ভাণ্ডারের হদিশ প্রকাশ্য এল। এই কাজটি করেছেন পশ্চিমবঙ্গের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জেনারেল অ্যান্ড অফিসিয়াল ট্রাস্টি বিপ্লব রায়। গতকাল, শুক্রবার চন্দ্রকেতুগড় সংলগ্ন হামিদপুর গ্রামের এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে ১৫ হাজার প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী উদ্ধার করেছেন তিনি। যার মূল্য ১০০ কোটি টাকার বেশি বলে দাবি করা হয়েছে। ওই প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রীগুলি হাজার হাজার বছরের ইতিহাসের নিদর্শন। অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ঢোকেন আসাদুজ্জামান নামে ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে।
কেমন করে মিলল প্রত্নতত্ত্ব সামগ্রীর হদিশ? সূত্রের খবর, নিজেকে অ্যান্টিক জিনিসের সংগ্রহকারী বলে পরিচয় দেন। গঙ্গাসাগরে এসেছেন বলে নিজেরই এক সহকর্মীকে পরিচয় দেন স্ত্রী হিসাবে। আর তারপরই আসাদুজ্জামানের গোডাউনে ঢুকে চক্ষু চড়কগাছ। বিপ্লব রায়ের নেতৃত্বেই এদিন এই অভিনব অভিযান চালানো হয়েছে। আজ, শনিবার সকাল থেকে ওই ব্যবসায়ীর বাড়ির সামনে লোকজনের যাতায়াত শুরু হয়েছে কৌতূহলের জেরে। তবে তাঁর বাড়ির আসেপাশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না সংবাদমাধ্যমকে।
ঠিক কী বলছেন বিপ্লববাবু? এই বিপুল পরিমাণ প্রত্নতত্ত্ব সামগ্রী উদ্ধার করে এখন হিরো বিপ্লববাবু। এই অপারেশনের বিষয়ে বিপ্লববাবু বলেন, ‘একটি আন্তর্জাতিক মানের মিউজিয়াম তৈরি করার জন্য আমরা প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসপত্রের খোঁজ করছি। আমরা জানতে পারি, এক ব্যক্তির বাড়িতে চন্দ্রকেতুগড়ের অসংখ্য প্রত্নতত্ত্ব সামগ্রী রয়েছে। আমি ক্রেতা সেজে ওঁকে ফোন করেছিলাম। বলেছিলাম, আমার বাড়ি দিল্লিতে। গঙ্গাসাগরে এসেছি। আপনার বাড়িতে প্রত্নতত্ত্ব সামগ্রী কিনতে যাব। এদিন আমার অফিসের দু’জন কর্মীকে আমার স্ত্রী এবং শ্যালিকা সাজিয়ে ওঁর বাড়িতে যাই। যাওয়ার আগে পুরো পরিকল্পনা কলকাতা পুলিশকে এবং বারাসত পুলিশ সুপারকে জানাই। পুলিশের একটি টিমও তৈরি ছিল। প্রথমে উনি অল্প জিনিস দেখাচ্ছিলেন। পছন্দ হচ্ছে বলে আরও বের করতে বলি। আমি সঙ্গে একটি বড় ব্যাগ নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে টাকা আছে বলেছিলাম। তখন ওই ব্যক্তি আমাদের ওর গোডাউনে নিয়ে যান। তখনই আমাদের সংকেত পেয়ে পুলিশের টিম ঘিরে ফেলে। গোডাউন থেকে আমরা প্রায় ১৫ হাজার প্রত্নতত্ত্ব সামগ্রী উদ্ধার করেছি। জিনিসগুলির বাজার মূল্য ১০০ কোটি টাকারও বেশি।’