স্থানীয় বাসিন্দা প্রিয়া সরকার, পুতুল সরকার, বিপুল বিশ্বাস, লিপিকা বিশ্বাসদের দাবি, কোনও খারাপ উদ্দেশ্য নিয়েই এই কাজ করা হয়েছে। আধার কার্ড ডিঅ্যাক্টিভেট হওয়ার পর থেকেই তাঁদের রেশন, ব্যাঙ্কের লেনদেন–সহ আধার নির্ভর কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অনেকেই আধারের সঙ্গে সম্প্রতি প্যানকার্ড লিঙ্ক করেছেন।
আধার কার্ড ডিঅ্যাক্টিভেট করার চিঠি
আধার কার্ড ‘ডিঅ্যাক্টিভেট’ করা হয়েছে। এই তথ্য উল্লেখ করে গত কয়েকদিন ধরে ডাকযোগে এমন চিঠি পেয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের বহু পরিবার। এই চিঠির বয়ানে কারণ হিসেবে যেটা লেখা হয়েছে সেটা পড়ে কপালে চোখ উঠেছে বাসিন্দাদের। কারণ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আধার কার্ডের ২৮(এ) রেগুলেশনে সংশ্লিষ্ট কার্ড ডিঅ্যাক্টিভেট করা হয়েছে। অর্থাৎ বিদেশি বলে সন্দেহ অথবা বাসস্থান সংক্রান্ত নথি উপযুক্ত না থাকলে এই ধারায় আধার কার্ড ডিঅ্যাক্টিভেট করা হয়। চিঠি হাতে পেয়ে এখন চরম আতঙ্কে ভুগছেন বাসিন্দারা।
এদিকে সামনে লোকসভা নির্বাচন। তার প্রাক্কালে এই ঘটনায় রাজনৈতিক তরজা চরমে উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এই নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী এই বিষয়টি প্রশাসনকে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বিধানসভা কক্ষে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের চা–বাগান শ্রমিকদের আধার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। আমি প্রশাসনকে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কত টাকা দিয়ে ঘুরে ঘুরে আধার কার্ড করেছে মানুষ। লোকসভা নির্বাচন আগেই আমি শুনলাম চা–বাগানের অনেকের আধার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। শুনেছি আধার কার্ড নাকি বাতিল করে দিয়েছে। যাতে মানুষ ভোট দিতে না পারে।’
অন্যদিকে ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার রাঁচির আঞ্চলিক অফিস থেকে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। খামের উপর সেই ঠিকানাই লেখা রয়েছে। আজ, শুক্রবার জামালপুর ব্লকের জৌগ্রাম, আবুজহাটি এলাকায় প্রায় ৬০ জনের বেশি মানুষজনের কাছে ডাকযোগে এই চিঠি এসে পৌঁছেছে। পোস্ট অফিস সূত্রে খবর, এই ধরনের আরও কয়েকশো চিঠি রয়েছে। যা সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এই খবর শুনে অনেকেই নাগরিকত্ব হারানোর আতঙ্কে ভুগছেন। এভাবেই কি সিএএ কার্যকর করা হবে? উঠছে প্রশ্ন। কারণ সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছেন, লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশের সর্বত্র সিএএ কার্যকর হবে। তারপরই এমন ঘটনা আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে।
এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দা প্রিয়া সরকার, পুতুল সরকার, বিপুল বিশ্বাস, লিপিকা বিশ্বাসদের দাবি, কোনও খারাপ উদ্দেশ্য নিয়েই এই কাজ করা হয়েছে। আধার কার্ড ডিঅ্যাক্টিভেট হওয়ার পর থেকেই তাঁদের রেশন, ব্যাঙ্কের লেনদেন–সহ আধার নির্ভর কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অনেকেই আধারের সঙ্গে সম্প্রতি প্যানকার্ড লিঙ্ক করেছেন। তখন কোনও সমস্যা হয়নি। এখন এমন ঘটনা হঠাৎ করে হওয়ায় আকাশ থেকে পড়ছেন সকলে। তাও আবার চিঠি দিয়ে করা হয়েছে। এই বিষয়ে জেলাশাসক বিধানচন্দ্র রায় বলেন, ‘বিষয়টি বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’ জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং জানান, সঠিক কী হয়েছে, সেটা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছে পুলিশ।