ভারতের বিদেশনীতির একেবারে অন্তঃস্থলে রয়েছে বৌদ্ধধর্ম। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিদেশ সফরে বারবার তারই প্রমাণ মিলেছে। ঠিক যেমন শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে অনুরাধাপুরার মহাবোধি মন্দির দর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখানে পৌঁছন, তখন তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়।শ্রীলঙ্কা বায়ুসেনার জওয়ানরা প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অফ অনার দেয়, যা সম্মানের প্রতীক।
রবিবার শ্রীলঙ্কা সফরের শেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী মোদী সে দেশের প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমার দিশানায়েকের সঙ্গে অনুরাধাপুরায় অবস্থিত পবিত্র জয় শ্রী মহাবোধি মন্দিরে যান। সেখানে মন্দিরের প্রধান পুরোহিত প্রধানমন্ত্রীর হাতে রক্ষা সূত্র বেঁধে তাঁকে স্বাগত জানান। এই মন্দির ভারত ও শ্রীলঙ্কার সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। অন্যদিকে, অনুরাধাপুরা হল শ্রীলঙ্কার একটি প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক শহর যা ধর্মীয় দিক থেকেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বৌদ্ধপীঠ দর্শনের বেশ কয়েকটি ছবি নিজেই পোস্ট করেছেন মোদী। নিজের ফেসবুক পেজে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘এই বৌদ্ধ নিদর্শনটি শান্তি, আধ্যাত্মিকতার এক জীবন্ত উদাহরণ। ভগবান বুদ্ধের শিক্ষা যেন আমাদের সর্বদা পথ দেখায়।'
ভারত-শ্রীলঙ্কা সভ্যতাগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে জয় শ্রী মহাবোধি মন্দিরের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ধারণা করা হয় যে বোধিবৃক্ষের উৎপত্তি ভারতের বোধগয়ায়। সম্রাট অশোকের কন্যা থেরি সংঘমিত্রা ভারত থেকে বোধিবৃক্ষের একটি চারা শ্রীলঙ্কায় নিয়ে গিয়েছিলেন। এবং অনুরাধাপুরায় এই মন্দিরের প্রাঙ্গণে সেই চারাগাছ রোপণ করা হয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৩৭৭ অব্দে শ্রীলঙ্কার রাজা বিজয়ের মন্ত্রী অনুরাধা এই শহরটি তার নামে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরপর রাজা পাণ্ডুকাভয় অনুরাধাপুরকে নিজের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা। এরপর, সিংহলী রাজারা ১-১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অনুরাধাপুরাকে রাজধানী হিসেবেই রেখে দিয়েছিলেন। ১৩০০ বছর ধরে শ্রীলঙ্কার রাজধানী ছিল এই অনুরাধাপুরা। বৌদ্ধধর্ম প্রচারের সময়, সম্রাট অশোকের কন্যা রাজকুমারী সংঘমিত্রা ভারতের বোধগয়া থেকে বোধিবৃক্ষের একটি চারা নিয়ে এখানে এসেছিলেন। পরে সেই চারাগাছটি একটি বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয়।বিশালাকৃতি এই বোধি গাছটি এখনও বর্তমান।এখানে বৌদ্ধরা নিয়মিত সাধনা ও প্রার্থনা করেন। পুজাপাঠও চলে।এই পবিত্র গাছ হল মন্দিরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান।
অনুরাধাপুরায় এখনও অনেক মঠ এবং স্তূপ রয়েছে। এখানকার জেতাবনরাময়া স্তূপটির উচ্চতা ১২২ মিটার। এটিকে বিশ্বের সর্বোচ্চ স্তূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি তৃতীয় শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। ১৪০ খ্রিস্টাব্দে, রাজা দুতুগেমুনু এখানে দাগোবা স্তূপ তৈরি করেছিলেন। মানুষের বিশ্বাস, সেখানে মহাত্মা বুদ্ধের দাঁত রাখা হয়েছিল। ইতিহাস অনুসারে, ৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে, ভারতের শাসক রাজেন্দ্র চোল প্রথম অনুরাধাপুর আক্রমণ করেন এবং তৎকালীন শাসককে বন্দী করেন। শাসক মাহিন্দাকে ভারতে আনা হয়। এরপরেই অনুরাধাপুরের পতন শুরু হয়। এখনও বৌদ্ধদের কাছে পবিত্রস্থল তো বটেই, হিন্দু ও দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছেও সমান আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হল মহাবোধি মন্দির।