বন্যপ্রাণীদের তাড়াতে গিয়ে এবার আরও এক অমানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকল পশ্চিম মেদিনীপুর। বুধবার গভীর রাতে খড়্গপুর বন বিভাগের অন্তর্গত হাড়িভাঙা গ্রামে হাতির পালের দিকে একের পর এক জ্বলন্ত আগুনের গোলা ছোড়া হয়। আর সেই আগুন পড়ে হাতির ওপর। এক শাবক দগ্ধ হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই ঘটনার ভিডিয়ো সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বন দফতর। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: আলিপুরদুয়ারে হাতির হানায় মৃতদের ৩৪% নেশাগ্রস্ত ছিলেন, চাঞ্চল্যকর দাবি বন বিভাগের
ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, পিছন থেকে হাতির দিকে ছোড়া হচ্ছে আগুনের জ্বলন্ত বল। দাউদাউ করে জ্বলছে আগুনের শলাকা। আর প্রাণভয়ে ছুটছে পুরো হাতির পাল। ভিডিয়োতে আরও দেখা গিয়েছে, একটি শাবক আগুনে দগ্ধ হয়ে যাওয়ার মা হস্তিনী উন্মত্ত চিৎকার করছে আর ছোটাছুটি করছে।
বন বিভাগের প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, হাতির পালটি বারডাঙা বিট থেকে চাঁদাবিলা রেঞ্জের দিকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল। সেই অভিযানে ছিলেন বনকর্মীরা। তবে কোনও ‘হুলা পার্টি’ ছিল না বলে দাবি করেছেন খড়্গপুর ডিভিশনের ডিএফও মণীশ যাদব। তিনি জানান, এই ধরনের হামলা নিন্দনীয় ও দুর্ভাগ্যজনক। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। দোষীদের শনাক্ত করে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, হাড়িভাঙা গ্রামের আশেপাশে বনাঞ্চল তুলনামূলকভাবে কম। ফলে হাতির পালটি অন্ধকারে পথভ্রষ্ট হয়ে গ্রামে ঢুকে পড়েছিল। এই সময়েই গ্রামবাসীদের একাংশ, যাঁদের অনেকে হুলা পার্টির সদস্য বলে অনুমান করা হচ্ছে, তাঁরা জ্বলন্ত শলাকা ও আগুনের গোলা ছুড়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করেন। এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ওই দলে প্রায় ২০ থেকে ২২টি হাতি ছিল। শাবকও ছিল। ওদের লক্ষ্য করে একের পর এক আগুনের গোলা ছোঁড়া হচ্ছিল। সেই আগুন সরাসরি গিয়ে পড়ছিল হাতির শরীরে। তাতে হাতির পালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনাটির পর থেকেই নিন্দার ঝড় উঠেছে গোটা জেলাজুড়ে। কেউ-কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বছর খানেক আগে ঝাড়গ্রাম শহরে এক হস্তিনীর পিঠে জ্বলন্ত শলাকা বিদ্ধ করে নির্মম ভাবে মারার ঘটনা। সেই মামলায় তিন হুলা পার্টি সদস্য গ্রেফতার হয়েছিলেন।
প্রাক্তন বনকর্তা সমীর মজুমদার জানান, এই ধরনের ঘটনা গভীর উদ্বেগজনক। এমন নিষ্ঠুরতা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কলাইকুন্ডা রেঞ্জের এক আধিকারিক জানান, ঘটনার সময় ওই রেঞ্জের দল হাতি তাড়াচ্ছিল ঠিকই। কিন্তু আগুন ছোড়া নিয়ে কেউ দায় স্বীকার করছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তদন্তের পরেই এই ঘটনার জন্য কারা দায়ী, তা জানা যাবে বলে মনে করছে বন দফতর।