এবার থেকে দেশের যেকোনও জায়গায়, কোনও ব্যক্তি যদি ঘৃণা ভাষণ দেন অথবা নিজের বক্তৃতার মাধ্যমে সামাজিক কাঠামোর ক্ষতি করেন, তাহলে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে পদক্ষেপ করতে পারবে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সারা দেশের সমস্ত পুলিশের উদ্দেশে এই নির্দেশিকা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
অন্যদিকে, এই প্রেক্ষিতেই আরও একটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত। যে আবেদনে সেইসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের অধিকার বা ছাড়পত্র চাওয়া হয়েছিল, যাঁরা মিথ্যাভাষণ দেন বা অরাজকতা এবং বিচ্ছিন্নবাদ সৃ্ষ্টি করতে প্রকাশ্যেই উস্কানি দেন।
সংশ্লিষ্ট জনস্বার্থ মামলাটি করেছিল 'হিন্দু সেনা সমিতি' নামে একটি সংগঠন। সেই মামলা শুনানির জন্য ওঠে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে।
মামলাকারীর বক্তব্য ছিল, বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের নেতা, বিশেষ করে যাঁরা বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, তাঁরা প্রকাশ্যে উস্কানিমূলক ভাষণ দিচ্ছেন এবং সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন।
মামলাকারীর অভিযোগ, এর ফলে দেশে অরাজকতা ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়ছে এবং জাতীয় নিরাপত্তাও ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
এমনকী, এই জনস্বার্থ মামলায় বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক পরিস্থিতির উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীদের এহেন আচরণের ফলে ভারতেও ওই দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
তেমন কোনও পরিস্থিতি ঠেকাতেই অবিলম্বে এই বিষয়ে শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপ দাবি করা হয় ওই জনস্বার্থ মামলায়।
যদিও শীর্ষ আদালত মামলাকারীর এই যুক্তি মানেনি। আদালতের বক্তব্য ছিল, 'ঘৃণা ভাষণ দেওয়া এবং ভুল বা মিথ্যা তথ্য উপস্থাপিত করা, বা ভুয়ো দাবি করার মধ্যে লক্ষ্যণীয় ফারাক রয়েছে।'
এরপরই শীর্ষ আদালত দু'টি বিষয়ের মধ্যেকার সেই ফারাক নির্দিষ্ট করে মামলাকারীর উদ্দেশে বলে, 'যে সমস্ত ঘৃণা ভাষণ সামাজিক সাম্য নষ্ট করছে, সেই ধরনের ঘৃণা ভাষণে লাগাম পরাতেই শীর্ষ সংশ্লিষ্ট মামলাটি শুনেছে। গাইডলাইন তৈরি করে দেওয়া হয়েছে এবং সেই গাইডলাইন অমান্য করা হলে তার জন্য অবমাননার নোটিসও জারি করা হয়েছে।...'
'...(কিন্তু) আপনারা যা চাইছেন, তার পরিসর বিশাল। আপনারা সবর্ত্র চলে গিয়েছেন। আমরা যদি এই মামলা গ্রহণ করি, তাহলে এই ধরনের আবেদনের বন্যা বয়ে যাবে। তখন তা সামাল দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।'
এরপরই প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, আদালত এই মামলা গ্রহণ করতে পারবে না। তাই, মামলাটি 'ডিসমিস' বা খারিজ করা হল। তবে, মামলাকারীর কাছে যদি কোনও নির্দিষ্ট ঘটনার প্রেক্ষিতে কোনও অভিযোগ থাকে, তাহলে তারা সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হতে পারে।