দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে টাকার পাহাড়। তা নিয়ে এই মুহূর্তে শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা দেশে। সেই আবহে ১৫ লক্ষ টাকার ঘুষ মামলায় ১৭ বছর পর বড় স্বস্তি পেলেন পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি নির্মল যাদব। সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত ১৭ বছরের পুরনো মামলায় প্রাক্তন বিচারপতি বিচারপতি নির্মল যাদবকে ক্লিন চিট দিয়েছে। শনিবার চণ্ডীগড়ের বিশেষ সিবিআই আদালত প্রাক্তন বিচারপতিকে যাবতীয় অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।
আরও পড়ুন: কপাল পুড়ল অগ্নিকাণ্ডে? ঘর থেকে উদ্ধার টাকার পাহাড়, কে এই হাইকোর্টের বিচারপতি?
ঘটনাটি ২০০৮ সালের ১৩ অগস্টের। সেই সময় হাইকোর্টের অন্য এক প্রাক্তন বিচারপতি নির্মলজিৎ কৌরের সেক্টর ১১-এর বাসভবনে ভুল করে ১৫ লক্ষ টাকা ভর্তি একটি প্যাকেট পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল, প্যাকেটটি প্রাক্তন বিচারপতি যাদবের জন্য পাঠানো হয়েছিল। তবে নাম একই রকম হওয়ায় ভুল করে প্রাক্তন বিচারপতি নির্মলজিৎ কৌরের বাসভবনে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। ঘটনায় প্রাক্তন বিচারপতি কৌর তৎকালীন পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং চণ্ডীগড় পুলিশকে বিষয়টি জানান। পরে ওই বছরের ১৬ অগস্ট এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। তার ১০ দিন পরে মামলাটি সিবিআই কাছে যায়। পরে ২০০৮ সালের ২৮ অগস্ট একটি নতুন এফআইআর দায়ের করে সিবিআই। সেই ঘটনায় নির্মল যাদবের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেই সময় শোরগোল পড়ে গিয়েছিল গোটা দেশে। অভিযোগ ছিল, যে ২০০৭ সালে পঞ্চকুলায় একটি সম্পত্তি বিবাদে তৎকালীন হরিয়ানার অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল সঞ্জীব বনসাল, প্রোমোটার রাজীব গুপ্তা এবং দিল্লির হোটেল ব্যবসায়ী রবীন্দ্র সিং ভাসিনের পক্ষে রায় দেওয়ার জন্য এই টাকা দেওয়া হয়েছিল।
২০০৮ সালে বিচারপতি যাদবের নাম এই কেলেঙ্কারিতে উঠে আসায় তাঁকে ছুটিতে যান পাঠানো হয়। পরবর্তীতে তাঁকে উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টে বদলি করা হয়। তদন্তের পর সিবিআই একটি ক্লোজার রিপোর্ট দাখিল করে। তবে সিবিআই আদালত ক্লোজার রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে এবং পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেয়। ২০১০ সালের ২৮ জুলাই ভারতের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি নির্মল যাদবের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য সিবিআইকে অনুমোদন দেন। পরে ২০১১ সালের ১ মার্চ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দেন। ২০১১ সালের সালেই সিবিআই এই মামলায় চার্জশিট দাখিল করে। বিচারপতি যাদব হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে দু'বার এই মামলাকে চ্যালেঞ্জ করেন। কিন্তু, ব্যর্থ হন। পরে ২০১৪ সালে সিবিআই আদালত বিচারপতি নির্মল যাদব সহ মামলার সকল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট গঠনের নির্দেশ দেয়। এরপর ২৭ মার্চ বিচার শেষ হয়।
গোটা মামলায় ৬৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। বিচার চলাকালীন চারজন সাক্ষীর মৃত্যু হয়েছে। সঞ্জীব বনসালের কেরানি যিনি ভুল করে টাকা প্রাক্তন বিচারপতি নির্মলজিৎ কৌরের বাসভবনে অর্থ পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি বিচার চলাকালীন মস্তিষ্কের টিউমারে মারা যান। জানা গিয়েছে, ১৭ বছরে কমপক্ষে ৩০০ বার এই মামলার শুনানি হয়েছে।