ইন্দোনেশিয়া সফর থেকে ফিরেই সোজা মুম্বই পৌঁছে গেলেন ভারতীয় নৌসেনাবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশ ত্রিপাঠী। শুক্রবার তিনি মুম্বই পৌঁছন। গত ১৮ ডিসেম্বর এই মুম্বইয়েই পর্যটক বোঝাই একটি ফেরিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে নৌসেনার একটি বোট। বলা হচ্ছে, সেটির নাকি ট্রায়াল চলছিল। এই দুর্ঘটনার খেসারত চোকাতে হয় ১৫টি প্রাণ দিয়ে!
এই ঘটনায় নৌসেনার ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। শুরু হয়েছে তদন্তের কাজও। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই এই ইস্যুতে নৌসেনাবাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলের কমান্ডার ভাইস অ্য়াডমিরাল সঞ্জয় সিং ও অন্য়ান্য শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন নৌসেনা প্রধান।
প্রসঙ্গত, নৌসেনা প্রধানের পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নিরাপত্তা ও সুরক্ষার প্রশ্নে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেন অ্য়াডমিরাল ত্রিপাঠী। এমনকী, এই ইস্যুতে গত ৪ জুন সম্পূর্ণ বাহিনীর উদ্দেশে চিঠিও লেখেন তিনি।
এদিকে, ইতিমধ্য়েই প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে লিখিতভাবে দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট পাঠিয়েছে নৌসেনা কর্তৃপক্ষ।
যদিও সূত্রের দাবি, এই প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট সামনে আসার পর থেকেই একাধিক প্রশ্ন উঠছে। যার জবাব এখনও অধরা।
যেমন - প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, যে বোটটি পর্যটক বোঝাই 'নীল কমল' ফেরিতে ধাক্কা মেরেছিল, সেটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ৪৫ নট। দুর্ঘটনার সময় হাই স্পিডে থাকাকালীন ওই বোটটির ইঞ্জিন এবং ব়্যাডার আটকে যায়। ফলে সেটি চালকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
কিন্তু, প্রশ্ন হল, কেন সেই সময় ইঞ্জিন পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য বোটে থাকা 'ক্র্যাশ স্টপ বাটন' (সংঘর্ষ প্রতিরোধী বোতাম বা সুইচ) ব্যবহার করা হল না? এ নিয়ে বাড়ছে রহস্য।
কারণ, এই প্রশ্নের জবাব কেবলমাত্র সেই চিফ পেটি অফিসারই দিতে পারবেন, যিনি সেদিন বোটটি চালাচ্ছিলেন এবং বর্তমানে আইসিইউ-তে চিকিৎসাধীন।
প্রাথমিক তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় ওই ফেরি ওভারলোডেড ছিল। এবং যাত্রীদের মধ্যে কেউই নিয়ম অনুসারে লাইফ জ্যাকেট পরে ছিলেন না। অথচ, সেটা পরা থাকলে যাঁদের জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের প্রাণ বেঁচে যেত।
বস্তুত, যাঁদের প্রাণ এই দুর্ঘটনায় গিয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই আরব সাগরে ডুবে মারা গিয়েছেন। দুর্ঘটনাজনিত আঘাতের কারণে নৌবাহিনীর এক কমান্ডো এবং ফেরিতে থাকা তিন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
তদন্তে আরও উঠেছে, যে ফেরিটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে, তার যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৮৪। এবং সঙ্গে প্রত্যেকটি সফরে ছ'জন করে কর্মী থাকার কথা। কিন্তু, সেদিন ওই ফেরিতে ১০৭ জন যাত্রী ছিলেন। পাশাপাশি, নিরাপত্তাজনিত কোনও নির্দেশিকাই ফেরিতে মানা হয়নি।