এক ধর্মযাজকের দেহ কবর দেওয়া নিয়ে তুমুল অশান্তি! ঘটনা গড়াল আদালত পর্যন্ত! শেষমেশ আদালতের নির্দেশে এবং পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে বাবার দেহ কবর দিলেন ছেলে! ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ছত্তিশগড়ের বাস্তার জেলার একটি গ্রামে।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, যে ধর্মযাজকের দেহ কবর দেওয়া নিয়ে এত ঝামেলা, তাঁর নাম সুভাষ বাঘেল। সুভাষের জন্ম হয়েছিল একটি মাহার পরিবারে। পরবর্তীতে তিনি খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেন। দীর্ঘ সময় ধরে অসুস্থ থাকার পর সম্প্রতি তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর তাঁর ছেলে রমেশ বাঘেল ভেবেছিলেন গ্রামেরই কবরস্থানে বাবার দেহ সমাধিস্থ করবেন। ওই কবরস্থান মূলত খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্যই বরাদ্দ। কিন্তু, গ্রামেরই কিছু মানুষ এর বিরোধিতা করেন। ফলত, ছত্তিশগড় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন রমেশ।
আদালত সব শুনে রমেশকে বলে, তিনি যদি গ্রামের কবরস্থানে তিনি তাঁর বাবা দেহ কবর দেন, তাহলে 'অশান্তি' ছড়াতে পারে। 'বৈষম্য' সৃষ্টি হতে পারে। তাই, আদালত তাঁকে প্রস্তাব দেয়, গ্রামের কবরস্থানের বদলে নিকটবর্তী কবরস্থানে (কারকাপাল) তিনি তাঁর বাবার দেহ কবর দিতে পারেন।
কিন্তু, হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণ বা যুক্তি মন থেকে মানতে পারেনি সদ্য বাবাকে হারানো রমেশ। তিনি উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। শীর্ষ আদালতকে জানান, তাঁর পরিবারের অন্য়ান্য সদস্য, যাঁদের এর আগে মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা গ্রামেরই কবরস্থানে অন্তিম শয্য়ায় শায়িত রয়েছেন। তাহলে তাঁর বাবাকে কেন সেখানে কবর দেওয়া যাবে না?
কিন্তু, শীর্ষ আদালতও এই মামলায় ঐক্যমতের ভিত্তিতে রায়দান করতে পারেনি। গত সোমবার বিচারপতি বি ভি নাগারত্না এবং বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মার বেঞ্চ এই মামলায় একটি 'স্প্লিট ভার্ডিক্ট' শোনায়।
বিচারপতি নাগারত্নার রায় ছিল, রমেশ তাঁদের পারিবারিক জমিতে তাঁর বাবার দেহ কবর দিতে পারেন। অন্যদিকে, বিচারপতি শর্মা বলেন, ওই প্রয়াত ব্যক্তির দেহ গ্রাম থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে কারকাপালের কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হোক।
কিন্তু, মৃতের ছেলে রমেশ চেয়েছিলেন তাঁর বাবার দেহ তাঁদের চিন্দওয়াড়া গ্রামের কবরস্থানেই সমাধিস্থ করা হোক। যদিও শেষমেশ ঠিক হয়, কারকাপালের কবরস্থানেই ওই দেহ কবর দেওয়া হবে। এবং সেটা দ্রুত। কারণ, প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে দেহটি মর্গে সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছিল।
অন্যদিকে, রাজ্য সরকারের তরফেও প্রস্তাব দেওয়া হয়, কারকাপালের কবরস্থানেই ওই ব্যক্তির দেহ সমাধিস্থ করা হোক। রাজ্য প্রশাসনের তরফে অ্য়াম্বুল্য়ান্সে ওই দেহ কবরস্থান পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয় এবং সঙ্গে পুলিশের পাহারাও প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, এই মামলায় গত ২২ জানুয়ারি রায়দান স্থগিত রেখেছিল শীর্ষ আদালত। পরবর্তীতে সোমবার এই মামলায় রায়দান হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মধ্যরাতে ওই দেহ কবর দেওয়া হয়।
পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, কবর দেওয়ার সময় সেখানে পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দারাও উপস্থিত ছিলেন।
বাস্তারের পুলিশ সুপার শালাভ সিনহা জানান, 'প্রায় মধ্যরাত নাগাদ দেহ কবর দেওয়া হয়। আমরা সেখানে পুলিশ এবং প্রশাসনের প্রতিনিধিদের পাঠিয়েছিলাম। পরিবারের সদস্যরাও যাতে সমাধি দেওয়ার সময় উপস্থিত থাকতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।'