বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সঙ্গে-সঙ্গেই পাকিস্তানপন্থীদের উদ্দেশ্যে বিশেষ বার্তা দিলেন নবগঠিত 'জাতীয় নাগরিক পার্টি' (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বুঝিয়ে দিলেন পাকিস্তানপন্থী রাজনীতি বাংলাদেশে চলবে না। সেইসঙ্গে, ভারত বিরোধিতারও সুর চড়ালেন তিনি।
এদিন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মানিক মিঞা অ্যাভিনিউয়ে এনসিপি-র আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে। সেই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই নাহিদ ইসলাম বলেন, 'বাংলাদেশে ভারত ও পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির ঠাঁই হবে না। আমরা বাংলাদেশকে সামনে রেখে, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ সামনে রেখে রাষ্ট্রের পুনর্নির্মাণ করব।'
একইসঙ্গে, নাহিদ বুঝিয়ে দেন, অতীতে বাংলাদেশে কী হয়েছে, তা নিয়ে তাঁদের নবগঠিত রাজনৈতিক দল যতটা না আগ্রহী, তার তুলনায় তাঁরা অনেক বেশি আগ্রহী দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে। তিনি বলেন, 'আমরা সামনের কথা বলতে চাই। পিছনের ইতিহাস অতিক্রম করে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের কথা বলতে চাই।'
এদিনের এই মঞ্চ থেকে একইসঙ্গে বাংলাদেশে বিকল্প রাজনৈতিক উত্থানের পক্ষে সওয়াল করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, 'আজকের মঞ্চ থেকে শপথ (নিচ্ছি), বাংলাদেশকে বিভাজিত করা যাবে না।'
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম 'প্রথম আলো'-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চে একটি লিখিত ভাষণ পাঠ করেছেন নাহিদ ইসলাম। সেই ভাষণে ব্রিটিশ শাসন থেকে শুরু করে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের কথা, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা হলেও কোথাওই বাংলাদেশের ইতিহাস ও স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির সঙ্গে ভারতের যোগসূত্র বা ভারতের অবদান উল্লেখ পর্যন্ত করা হয়নি।
একইসঙ্গে, শেখ হাসিনার শেষ ১৫ বছরের শাসনকালের সঙ্গে ফ্যাসিবাদের তুলনা করা হয়েছে। এবং দাবি করা হয়েছে, 'স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়েও আমরা গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে - এমন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে পারিনি।'
আর এখানেই একটি বিরাট দাবি করেছেন নাহিদ। তাঁর বক্তব্য, তাঁদের দলের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে প্রথমবারের জন্য 'একটি গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক ও জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল' প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যাদের উদ্দেশ্য কেবলমাত্র একটি সরকারের পতন ঘটিয়ে অন্য একটি সরকারকে ক্ষমতায় বসানো নয়। বরং, জনগণের দাবি মেনে ও তাদের স্বার্থ রক্ষা করেই বাংলাদেশের পুনর্গঠন করা।
নাহিদ তাঁর লিখিত ভাষণ পাঠ করে জানিয়েছেন, 'আমরা এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ চাই, যেখানে সমাজে ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বিভেদের বদলে ঐক্য, প্রতিশোধের বদলে ন্যায়বিচার এবং পরিবারতন্ত্রের বদলে মেধা ও যোগ্যতার মানদণ্ড প্রতিষ্ঠিত হবে। আমাদের রাজনীতিতে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কোনও স্থান হবে না।'