যখন একজন মহিলা দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে স্বেচ্ছায় লিপ্ত থেকেছেন, তখন এটা কখনই মানা যায় না যে তিনি শুধুমাত্র বিয়ের প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন বলেই ওই সম্পর্কে ছিলেন। একটি মামলার প্রেক্ষিতে তার পর্যবেক্ষণে একথা বলল দিল্লি হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে, এই সংশ্লিষ্ট ধর্ষণের মামলা থেকে অভিযুক্তকে খালাসও করে দিল উচ্চ আদালত।
বিচারপতি জসমীত সিংয়ের বেঞ্চ এই প্রসঙ্গে বলে, কারও বিরুদ্ধে বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হলে, সেই অভিযোগের স্বপক্ষে জোরদার প্রমাণ থাকা জরুরি। যা এই মামলার ক্ষেত্রে ছিল না বলে মনে করেছে আদালত।
সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ তার পর্যবেক্ষণে আরও জানায়, যদি পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে দুই ব্যক্তির মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক ও যৌন সম্পর্ক বজায় থাকে, তাহলে তার অর্থ এই নয় যে শুধুমাত্র বিয়ের প্রতিশ্রুতির উপর নির্ভর করে সেই সম্পর্ক বজায় রাখা হয়েছিল।
যদি এই ধরনের ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করতেই হয়, তাহলে জোরালো প্রমাণ থাকা দরকার। যা থেকে এটা বোঝা যাবে যে শুধুমাত্র শারীরিক বা যৌন সম্পর্ক স্থাপন করার জন্যই বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল এবং আদতে প্রথম থেকেই সেই প্রতিশ্রুতি পালনের কোনও সদিচ্ছা অভিযুক্ত ব্যক্তির ছিল না।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারির একটি শুনানিতে এই পর্যবেক্ষণ করেছিল দিল্লি হাইকোর্ট। সেই অর্ডার প্রকাশ করা হয় গত শনিবার।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সময় অভিযুক্ত তরুণের বয়স ছিল ১৮ বছর ৬ মাস। এর আগে নিম্ন আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে। তাঁর বিরুদ্ধে অপহরণ এবং ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ফলে তাঁকে ১০ বছরের জন্য হাজতবাসও করতে হত। ২০২৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর নিম্ন আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে। কিন্তু, নিম্ন আদালতের সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে এরপর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই যুবক। বিয়ের মিথ্য়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
এই ঘটনায় প্রথম যে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল, সেটি করেছিলেন, সংশ্লিষ্ট তরুণীর বাবা। সেটা ছিল ২০১৯ সালের নভেম্বর মাস। তরুণীর বাবার দাবি ছিল, তাঁর ২০ বছরের মেয়ে এক পুরুষের সঙ্গে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছেন। পরে এই দু'জনকেই হরিয়ানার ধারুহেরা থেকে উদ্ধার করা হয় এবং এই ঘটনার পর ওই তরুণকে গ্রেফতার করা হয়।
হাইকোর্টে মামলা রুজু হওয়ার পর অভিযুক্তের আইনজীবী জানান, এই ঘটনার সঙ্গে অপরাধের কোনও সম্পর্ক নেই। ওই তরুণী এবং তাঁর মক্কেল পরস্পরকে পছন্দ করতেন এবং তাঁরা দু'জনই স্বেচ্ছায় একটি হোটেলে গিয়েছিলেন। এর সঙ্গে বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ধর্ষণের মতো অভিযোগের কোনও সম্পর্কই নেই।