'ডিনারের পর ল্যাপটপ খুলে আবার কাজে বসুন।' কর্মীদের এমনই নির্দেশ দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন পেশাদার নেটওয়ার্কিং সাইট লিঙ্কডইনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিড হফম্যান।তিনি বলেছেন, লিঙ্কডইনের প্রথম দিনগুলোতে কর্মীদের পরিবারের সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়ার পর বাড়ি থেকে ল্যাপটপ খুলে আবার কাজে ফিরে আসার প্রত্যাশা করা হতো। এই মন্তব্য গত বছর একটি পডকাস্টে তাঁর দেওয়া বক্তব্য থেকে উঠে এসেছে, যা স্টার্টআপে কাজ এবং জীবনের ভারসাম্য নিয়ে তাঁর কঠোর মনোভাবকে প্রকাশ করে। (আরও পড়ুন: মিষ্টি ভাষায় কড়া বার্তা ইউনুসকে, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে কী বললেন মোদী?)
আরও পড়ুন-১৮ ঘণ্টা বিদেশে আটকে ২০০ ভারতীয়! অসুস্থ যাত্রী, তুরস্ক বিমানবন্দরে চরম অব্যবস্থা
গত বছর ‘ডায়েরি অফ এ সিইও’ পডকাস্টে হফম্যান বলেন, 'যখন আমরা লিঙ্কডইন শুরু করি, তখন আমাদের দলে এমন লোকজন ছিল যাদের পরিবার ছিল। তাই আমরা বলতাম, ঠিক আছে, বাড়ি গিয়ে পরিবারের সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে নাও। তারপর, খাওয়ার পর ল্যাপটপ খুলে আবার কাজে ফিরে এসো এবং আমাদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ চালিয়ে যাও।' এই কথাগুলো লিঙ্কডইনের প্রাথমিক দিনগুলোর কঠোর কাজের সংস্কৃতির একটি ঝলক দেয়, যা ২০১৬ সালে মাইক্রোসফটের ২৬.২ বিলিয়ন ডলারে অধিগ্রহণের পথ প্রশস্ত করেছিল। এর আগে ২০১৪ সালে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ‘হাউ টু স্টার্ট এ স্টার্টআপ’ ক্লাসে তিনি বলেছিলেন, 'যদি আমি কোন স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতাকে বলতে শুনি, ‘আমি এভাবে আমার জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখি’ তবে বুঝতে হবে তারা জয়ের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়।' তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি কোভিড মহামারীর পর কর্মক্ষেত্রে সুস্থতা নিয়ে বাড়তি আলোচনার মধ্যেও অপরিবর্তিত রয়েছে। ‘ডায়েরি অফ এ সিইও’ পডকাস্টে তিনি আরও বলেন, 'জীবন-কাজের ভারসাম্য স্টার্টআপের খেলা নয়।' (আরও পড়ুন: শুল্ক নিয়ে ১৬টি দেশকে খানিক স্বস্তি ট্রাম্পের, তালিকায় নাম আছে ভারত-পাকিস্তানেরও)
হফম্যান তাঁর সমালোচকদের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থানের পক্ষে বলেন, যারা এই দৃষ্টিভঙ্গিকে ‘বিষাক্ত’ বলে মনে করে, তারা স্টার্টআপের বাস্তবতা বোঝে না। তিনি বলেন, 'যারা মনে করে এটি বিষাক্ত, তারা স্টার্টআপের খেলাটাই বোঝে না এবং তারা ভুল। এই খেলাটি তীব্র। আর যদি তুমি এটি না কর, তবে শেষ পর্যন্ত তোমার চাকরি থাকবে না।' তিনি এই কঠোর পরিশ্রমের আর্থিক পুরস্কারের কথাও উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, লিঙ্কডইনের প্রায় ১০০ জন প্রাথমিক কর্মী কোম্পানির সাফল্যের পর এমন আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য অর্জন করেছেন যে তাঁদের আর কাজ করার প্রয়োজন নেই। (আরও পড়ুন: মোদীর কাছে 'কথা' শুনেও মুখে হাসি ইউনুসের, দিলেন বিশেষ উপহার)
আরও পড়ুন: 'ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাশ হওয়ায় পসমন্দা মুসলিমরা খুব খুশি... আমরা পটকা ফাটিয়েছি'
লিঙ্কডইনের সহ-প্রতিষ্ঠাতার এই মন্তব্য সম্প্রতি পুনরায় প্রকাশিত হওয়ার পর তা ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মহামারীর পর থেকে কর্মক্ষেত্রে সুস্থতা এবং জীবন-কাজের ভারসাম্য নিয়ে আলোচনা বেড়েছে। অনেক সংস্থার কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নমনীয় সময়সূচি এবং ছুটির নীতি চালু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে হফম্যানের কঠোর অবস্থান অনেকের কাছে ‘বিষাক্ত’ মনে হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, এই ধরনের কাজের সংস্কৃতি কর্মীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।তবে, হফম্যান এই সমালোচনাকে খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'স্টার্টআপের জগৎ এমনই। এটি একটি তীব্র প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র, যেখানে বেঁচে থাকতে হলে সবকিছু দিতে হয়।' তাঁর যুক্তি, যারা এই তীব্রতা সহ্য করতে পারে না, তারা স্টার্টআপে টিকে থাকার জন্য উপযুক্ত নয়।হফম্যান এই কঠোর পরিশ্রমের পক্ষে আরেকটি যুক্তি দিয়েছেন, আর্থিক সাফল্য। তিনি উল্লেখ করেছেন যে লিঙ্কডইনের প্রায় ১০০ জন প্রাথমিক কর্মী এখন এমন অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যে আছেন যে তাঁদের আর কাজ করতে হবে না। এই আর্থিক পুরস্কার তাঁর মতে, স্টার্টআপে অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফল। তিনি বলেন, 'যদি তুমি জিততে পারো, তবে এই পরিশ্রমের ফল অসাধারণ হবে।'