২০১৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হলেন নরেন্দ্র মোদী। তাঁর ম্যাজিকে বিজেপি একাই ট্রিপল সেঞ্চুরি পার করেছিল। আর সেই ভোটে ৫২টি আসন পেয়েছিল রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস। তখন দলের সভাপতি তিনি। সেই ভরাডুবির পরই দলের সভাপতিত্ব ছেড়ে দেন রাহুল গান্ধী। অপরদিকে দলের ওপর নরেন্দ্র মোদীর কর্তৃত্ব আরও প্রবল হয়। নিজের আস্থাভাজন অমিত শাহকে সেই বছরই ক্যাবিনেটে যুক্ত করেন মোদী। এরপর থেকে তাঁর সরকার ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার, সিএএ-র মতো আইন সংসদে পাশ করিয়েছে। ২০২৪ সালে অবশ্য রাহুল গান্ধী দলের সভাপতিত্বে ফেরেননি। তবে তাঁর দল তুলনামূলক ভালো ফল করায় তিনি হয়েছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা। অপরদিকে ইতিহাস গড়ে তৃতীয়বার মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন বটে। তবে তাঁর দলের শক্তিক্ষয় হয়েছে। এই প্রথম তাঁর নেতৃত্বে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।
২০১৯ সালে মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি জয়লাভের পরই ৫ অগস্ট জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। আবার সেই বছরের শেষে সংসদে পাশ করানো হয়েছিল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। যা বর্তমানে আইনে পরিণত হয়েছে। বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির সঙ্গে মোদী উন্নয়নের রাজনীতিকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্প হোক কি ডিজিটাল ইন্ডিয়া তৈরির ছক, তাঁর সরকার বিশ্ব অর্থনীতিতে ছাপ ফেলার চেষ্টা করে গিয়েছে। তবে এর মাঝেও এসেছে বিতর্ক। আদানি ইস্যুতে বারবার জেরবার হয়েছে মোদী সরকার। রাহুল গান্ধী নিজে সংসদে দাঁড়িয়ে মোদী-আদানির ছবি দেখিয়েছেন। তারপরই আবার গুজরাটের এক আদালতে ২ বছরের কারাবাসের সাজা শুনতে হয়েছিল রাহুলকে। মানহানির ফৌজদারি মামলায় সেই সাজা শোনায় সাংসদ পদ খোয়াতে হয়েছিল রাহুলকে। সেই রাহুল অবশ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। ২০২৪ সালে মোদীকে ক্ষমতাচ্যুত না করতে পারলেও তাঁর গদিতে 'ধাক্কা' দিয়েছেন। নিজে হয়েছেন বিরোধী দলনেতা। বিরোধী জোটের 'মুখ' বলতে গেলে তিনিই ছিলেন ২০২৪ সালের ভোটে।
অপরদিকে মোদী কিন্তু বিশ্বস্তরে নিজেকে ভারতের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এই সময়কালে। ২০২৩ সালে জি২০ প্রেসিডেন্সি পেয়েছিল ভারত। আবার আমেরিকার সঙ্গে মিলে কোয়াড গোষ্ঠীভুক্ত হিসেবে ভারতের গুরুত্ব ক্রমেই বেড়েছে বিশ্ব রাজনীতিতে। একদিকে যেখানে পুতিন থেকে জেলেনস্কি মোদীর প্রশংসা করেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে মোদী একের পর এক সম্মান পান, সেখানেই আবার মোদীর হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির জেরে বেশ কিছু প্রতিবেশীর সঙ্গে ভারতের 'দূরত্ব' বেড়েছে।
অপরদিকে ঘরোয়া রাজনীতিতে ক্রমেই গুরুত্ব বেড়েছে রাহুল গান্ধীরও। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত পদযাত্রা করে দলকে আরও সংগঠিত করার চেষ্টা করেছেন রাহুল গান্ধী। সেই ভারত জোড়ো যাত্রার সুবাদে ভারতীয় ভোটারদের মধ্যেও যেন গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে রাহুলের। মোদীর 'বিকল্প' ২০২৪-এ তিনি হতে পারেননি বটে। তবে তিনি যে নেহাতই 'ফেলনা' নন, তা ২০২৪-এ বুঝিয়ে দিয়েছেন রাহুল গান্ধী।
গত পাঁচ বছরে বদলেছে অনেকটাই, আবার একই থেকেছে অনেক কিছু। ২০১৯ সালে মোদী যেখানে ছিলেন, আজও সেখানেই আছেন বটে - প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে। রাহুল গান্ধীর বরং রাজনৈতিক ভাবে 'পদোন্নতি' ঘটেছে - শুধুমাত্র সাংসদ থেকে বিরোধী দলনেতা। তবে এই দুই রাজনীতিবিদের জন্যেই পথ চলা এখনও অনেকটাই বাকি। যেখানে মোদী নিজের 'ব্র্যান্ড'কে আরও পোক্ত করতে চাইবেন। সেখানে রাহুল স্বভাবতই মোদীর কুর্সির দিকে ক্রমেই হাত বাড়নোর চেষ্টা করবেন।