সম্প্রতি কলকাতা শহরে ঘটা একটি ঘটনা যেন প্রশ্নের মুখে ফেলেছে গোটা বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে। মত্ত অবস্থায় সিরিয়াল পরিচালকের বেপরোয়া গাড়ি ঠাকুরপুকুরের কাছে ধাক্কা মারে পথচারীদের। সিরিয়ালের টিআরপি ভালো আসার আনন্দে রাতভর পার্টি, দেদার মদ্যপান, আর তারপর সকালে নিজেই ড্রাইভ করে বাড়ি ফেরার পথে, রাস্তা ছেড়ে সোজা বাজারের মধ্যে গাড়ি ঢুকিয়ে দেন পরিচালক সিদ্ধান্ত দাস ওরফে ভিক্টো। সেদিন পার্টি করছিলেন আরও অনেক চেনা মুখ, ছিলেন অভিনেতা আরিয়ান ভৌমিক, অভিনেত্রী ঋ সেনগুপ্ত, কার্যকরী প্রযোজক শ্রিয়া বসু, অভিনেতা-ইউটিউবার স্যান্ডি সাহা। ভিক্টোর সঙ্গে সেদিন গাড়িতে ছিলেন শ্রিয়াও। তিনি যদিও এখন জামিনে বাইরে রয়েছেন।
একাধিক তারকা ইতিমধ্যেই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। এবার মুখ খুললেন ঋদ্ধি। তিনি লেখেন, ‘স্রেফ একটা সিরিয়ালের TRP বাড়ার জন্য কয়েকজন মানুষের ফুর্তির পরিণতি? একজন মানুষ সকালবেলা সংসারের জন্য বাজার করতে গিয়ে প্রাণ হারালেন। বোমা, গুলি, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় সংঘর্ষ, অতিমারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা হার্ট অ্যাটাক নয়, এক দল মানুষের উল্লাসের জন্য।’
ঋদ্ধি আরও লেখেন তাঁর এই পোস্টে, ‘আকণ্ঠ মদ্যপান করে একজন গাড়ির স্টিয়ারিং ধরলেন, আর কিছু লোক সেটা জেনেও গাড়িতে উঠতে রাজি হলেন। তারপর একজন ধরা পড়ল, বাকিরা বেল পেয়ে গেল।’
এই ঘটনার পর, মদ্যপ শ্রিয়া বসুর একটি ভিডিয়ো ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়াতে। সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা পর্যন্ত নেই। নিজে উঠতে পারছেন না পুলিশ ভ্যানে। বারবার শুয়ে পড়ছেন রাস্তায়, এতটাই নেশা করেছেন তিনি। যদিও টলিউডের অনেক তারকারাই দাবি করছেন, শ্রিয়ার এই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া ‘সঠিক’ নয়। দোষির শাস্তি তাঁরা চান ঠিকই, তবে কোনো মেয়ের এই ধরনের ভিডিয়ো শুধুমাত্র ‘ভিউজ পাওয়ার আশা’য় ছড়িয়ে দেওয়াটাও কাম্য নয়।
এই তালিকায় রয়েছেন একসময় বিজেপি করা রূপাঞ্জনা মিত্র। তিনি একটি পোস্টে লেখেন, ‘আমাদের বাংলা সিনেমা ও টিভি ইন্ডাস্ট্রি মোটেও এরকম নয়। যারা নিজেদের সম্মান রাখতে পরে না..., মদ্যপান করে হুশ হারিয়ে গাড়ি চালিয়ে মানুষ পিষে ফেলে ভাবে পার পেয়ে যাবে তাদের কি হাল করে সাধারণ মানুষ তা তো নিজের চোখে ভিডিয়োতেই দেখলাম, তবে এটাও দেখলাম কত মানুষ একটি মেয়েকে পন্য বানিয়ে দিল… কার দোষ সেটা ওপরওয়ালা বিচার করবেন আর আদালত তবে ভিডিয়োগুলো যে হারে কনটেন্ট এর মতো ভাইরাল হচ্ছে সেটাও কি খুব দরকার?’
সঙ্গে সেই গাড়িতে সেদিন থাকা ‘মদ্যপ’ মানুষগুলোর জন্য রূপাঞ্জনা লিখলেন, ‘তোরা কি জানতিস না যে- যদি তোরা সম্পূর্ণ মদ্যপ অবস্থায় ধরা পড়িস এবং তারপর তোদের ইচ্ছামতো গাড়ি দিয়ে লোকজনকে চাপা দিস, তাহলে কেউ তোদের প্রতি সহানুভূতি দেখাবে না। লজ্জা করছে। সত্যি লজ্জা করছে। হুঁশ নেই যাদের তারা আবার কীসের মানুষ?’