বাংলা নিউজ > বায়োস্কোপ > Rwitobroto Mukherjee: 'বাবা আমার কোচ', 'ফাদার্স ডে'-তে বাবা শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে আবেগে ভাসলেন ছেলে ঋতব্রত
পরবর্তী খবর
Rwitobroto Mukherjee: 'বাবা আমার কোচ', 'ফাদার্স ডে'-তে বাবা শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে আবেগে ভাসলেন ছেলে ঋতব্রত
5 মিনিটে পড়ুন Updated: 16 Jun 2024, 11:18 AM ISTSayani Rana
বড় পর্দায় 'কাহিনী' দিয়ে হাতেখড়ি দেওয়া সেই ছেলেটা এখন জনপ্রিয় অভিনেতা। কিন্তু এত সাফল্যের পরও বাবা তাঁর অনুপ্রেরণা, তাঁর কোচ। তাই ‘ফাদার্স ডে’র দিন নিজের স্মৃতির ঝাঁপি উপুড় করে বাবা শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়ের নানা কথা হিন্দুস্থান টাইমস বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ভাগ করে নিলেন ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়।
শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় ও ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়
বাবাকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখে ছোট্ট ঋতব্রতর মনে জাগতো একাধিক প্রশ্ন। আর অক্লান্ত ভাবে শিশু মনের সেই একরাশ প্রশ্নের উত্তর দিতেন বাবা শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়। ছবির সেট থেকে থিয়েটারের ব্যাকস্টেজ সবটাই ঘুরে দেখা বাবার হাত ধরে, বাবার হাত ধরেই আসা মঞ্চে। তারপর তো রূপকথা, বড় পর্দায় 'কাহিনী' দিয়ে হাতেখড়ি দেওয়া সেই ছেলেটা এখন জনপ্রিয় অভিনেতা। কিন্তু এত সাফল্যের পরও বাবা তাঁর অনুপ্রেরণা, তাঁর কোচ। তাই 'ফাদার্স ডে'-এর দিন নিজের স্মৃতির ঝাঁপি উপুড় করে বাবা শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়ের নানা কথা হিন্দুস্থান টাইমস বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ভাগ করে নিলেন ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়।
ক্যারিয়ারে এতটা সাফল্য, পর পর এত ভালো কাজ নিজের কঠোর পরিশ্রম তো আছেই, কিন্তু এক্ষেত্রে বাবার ভূমিকাটা ঠিক কী?
ঋতব্রত: বাবা আমার অনুপ্রেরণা। ছোটবেলা যখন টিভিতে 'এক আকাশের নীচে' হতো তখন আমিও দেখতাম। আর দেখতে দেখতে মনে হতো বাবা বাড়িতে আছেন, তাহলে টিভিতে দেখা যাচ্ছে কী করে? এটা নিয়ে নানা প্রশ্নও করতাম বাবাকে। তখন তিনি আমাকে বলতেন, 'এটা আগে বানানো হয়, পরে দেখানো হয়।' ছোটবেলায় আমাদের দল 'নাট্য আনন'-এর একটি নাটক দেখতে গিয়েছিলাম। চন্দন সেনের নির্দেশনায় উৎপল দত্তের নাটক 'সূর্যশিখা'। সেটা দেখতে গিয়ে মনে যে কত প্রশ্ন উঁকি দিয়েছিল। লাইট কোথা থেকে পড়ছে, কস্টিউমগুলো কীভাবে হয়? সেই সব প্রশ্নের উত্তর বাবা তো দিয়েই ছিলেন। তারপর আবার থিয়েটারের ব্যাকস্টেজও ঘুরে দেখান আমাকে। এই ব্যাকস্টেজ প্রসঙ্গে মনে পড়ল, বাবার সঙ্গেই আমার প্রথম সিনেমার সেট ঘুরে দেখা। তখন বুম্বা কাকুর (প্রসেনজিত চট্টোপাধ্যায়) ছবি 'রাজমহল'-এর শ্যুটিং চলছে, একদিন বাবা সেখানে আমাকে নিয়ে গিয়ে সেট ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন। বাবা বুঝিয়ে ছিলেন, সেট মানে সত্যিকারের বাড়ি নয়, থার্মোকল বা কাঠ দিয়ে বানানো একটা বস্তু।
আসলে ছোট থেকেই বাবাকে নানা প্রশ্নে জেরবার করছি, আর বাবা হাসি মুখে সব উত্তর দিয়ে গিয়েছে। তবে শুধু ছোটবেলায় নয়। বড় হওয়ার পর রাজনীতি সম্বন্ধেও আমার যা যা প্রশ্ন আমি বাবাকেই করতাম। তবে শুধু আমিই যে সব সময় প্রশ্ন করতাম তেমনটা নয়, বাবাও আমাকে বলতেন কী বই পড়তে হবে, কোন কোন ছবি বা কার কোন কাজ দেখতে হবে সবটা। আসলে বাবা আমার কোচ।
ঋতব্রত: না না, বাবা কখনওই বকাঝকা করেন না। তবে বাবা আমরা কাজ দেখে ভালো- মন্দটা অবশ্যই জানান। যেমন একটা ঘটনা বলতে পারি, এই কিছুদিন আগেই কথা। আমি একটা অডিও স্টোরি করেছি। সেখানে আমার 'র' আর 'ড়' উচ্চারণ নিয়ে বাবা আমাকে তখন বলেছিলেন। বাবা জানান, যে ওই দুই 'র'-এর উচ্চারণ এত ভুলভাল হয়েছে যে সেটা কানে লেগেছে। খুব বেশি হলে বাবা এভাবেই বলেন, কিন্তু কখনওই বকাঝকা বা ওই বিষয়গুলো করেন না।
আর প্রশংসা? যতদূর শুনেছি ভালো কাজ করলে আপনাদের বাড়িতে তো একটা পুরস্কার দেওয়ার ব্যাপার রয়েছে…
ঋতব্রত: হ্যাঁ, আমার ঠাকুমা এটা শুরু করেছিলেন। যখনই বাবার কোনও কাজ ওঁর ভালো লাগত, তখন বাবাকে ১১ টাকা বা ২১ টাকা বিংবা ৫১ টাকা দিয়ে বলতেন, 'তোমার ওই সিনেমাটা দেখলাম বা ওই কাজটা দেখলাম খুব ভালো কাজ হয়েছে, তাই এটা তোমার উপহার।' তারপর 'কাহিনী'-তে আমার কাজ দেখেও ঠাকুমা আমাকে উপহার দিয়েছিলেন। আর এই প্রথাটা এখনও আমাদের বাড়িতে চলে আসছে। এখনও পর্যন্ত আমি যদি কোনও ভালো কাজ করি বাবা আমাকে উপহার হিসেবে টাকা দেন। আমাদের নাটক 'দিল্লি চলো'-তে এবার যে রোলটা করছি, আগেরবার সেটা করিনি অন্য একটা চরিত্র করেছিলাম। সেটা দেখে বাবা বাড়ি ফিরে এসে আমার হাতে হাজার এক টাকা দিয়ে বলেছিলেন, 'খুব ভালো কাজ হয়েছে।'
নাটকের কাজ দেখে তো বাবা তার মানে বেশ প্রশংসা করেছেন, কিন্তু নাটকে অভিনয়ের ক্ষেত্রে কি কখনও ইনপুট দেন?
ঋতব্রত: হ্যাঁ অবশ্যই, আমি খুব ছোট বয়স থেকে আমাদের দলে কাজ করা শুরু করেছি। তাই অনেকটাই বাবার কাছে শেখা, বাবা খুব সহজেই অনেক কিছু বুঝিয়ে দিতেন। রিহার্সালের যদি আমার অভিনয় দেখে বাবার কিছু মনে হতো, সেটাও বাড়ি ফিরে এসে আমাকে বলতেন।
বাড়ি ফিরে কেন?
ঋতব্রত: আসলে, বাবা মনে করেন পরিচালক যে কথাটা বলছেন সেটার একটা গুরুত্ব রয়েছে। তাই বাবা বলতেন, 'আমি যেহেতু পরিচালক নই তাই রিহার্সাল স্পেসের মধ্যেও আমি কিছু বলতে পারি না।' এটা আমিও মনে করি।
তাহলে আপনার অভিনেতা জীবনে তো বাবার ভূমিকা অনেকটাই...
ঋতব্রত: হ্যাঁ, সেটা তো বটেই। তবে কেবল বাবা নন, আমার অভিনেতা জীবনে আরও একটি মানুষের ভূমিকা রয়েছে তিনি হলেন চন্দন কাকু, মানে চন্দন সেন। তিনি আমার বায়োলজিক্যাল ফাদার নন ঠিকই, কিন্তু আমার পিতৃস্থানীয়। আমিও তাঁর কাছে সন্তানসম। চন্দন কাকু আমার নাটকের গুরু, অভিনয়ের গুরু। আর আমরা যেহেতু আজ 'ফাদার্স ডে' নিয়ে কথা বলছি তাই আরও একটি মানুষের নাম না নিলেই নয়, তিনি আমার মেসো। তিনিও আমাকে ছেলের মতোই স্নেহ করেন।