ফেডারেশন ও ড্রেসার গিল্ডের দিকে কাজ কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ এনে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন কেশসজ্জা শিল্পী। আপাতত তিনি বাঙ্গুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই টলিপাড়ায় এখন হুলুস্থুল কাণ্ড। অনেকেই থ্রেট কালচারের এই ভয়ঙ্কর পরিণতি নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন। ক্ষোভ উগরে দিয়ে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন স্বস্তিকা, শ্রীলেখা মিত্র, সুদীপ্তা চক্রবর্তী থেকে শুরু করে আরও অনেকেই। ঠিক তখনও বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন অতিনেতা, পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়।
কেশসজ্জা শিল্পীর আত্নহননের চেষ্টার পর ফেসবুকের পাতায় লম্বা পোস্টে ভয়ঙ্কর অভিযোগ এনেছেন তথাগত। লিখেছেন, ‘চিঠিটা পড়লে স্পষ্ট হবে এটা আত্মহত্যা নয় এটা খুনের চেষ্টা।’ আর কী লিখেছেন তথাগত?
(আরও পড়ুন: 'কোনও হল মালিক পাকিস্তানি ছবি দেখালে, তার মূল্য চোকাতে হবে', ফাওয়াদের ছবি নিয়ে হুঁশিয়ারি রাজ ঠাকরের)
তথাগত মুখোপাধ্যায় লেখেন, ‘সেই সমস্ত মহিলা ও পুরুষ শিল্পীদের উদ্দেশ্যে যারা কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের সুরক্ষা নিয়ে সরব। কেশসজ্জা শিল্পী… (নাম গোপন রাখা হল) গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন এবং এই নিচের চিঠিটা পড়লে স্পষ্ট হবে এটা আত্মহত্যা নয় এটা খুনের চেষ্টা। এই রাজ্যে পলিটিকাল ছাতার তলায় গড়ে ওঠা সংগঠন তৈরি করে শিল্পীদের অধিকার রক্ষার নামে আসলে যেটা চলে তার কংকাল এই চিঠি।এ রাজ্যে সংগঠন একজন মানুষের কাজের সুরক্ষার নামে আসলে তার স্বাধীনতা, তার কাজ, তার শিল্প তার ব্যক্তিগত জীবন,তার রাজনীতি সবটা নিয়ন্ত্রন করতে চায়। এবং তার অন্তিম পরিণতি একটা মৃত্যুসম পরিস্থিতিতে পর্যবসিত হয়। যদিও এই মৃত্যুসম পরিস্থিতি এই ঘটনায় রুপক মাত্র নয়।’
তথাগত আরও লিখেছেন, ‘সম্প্রতি কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অধিকার ও সুরক্ষা নিয়ে আমাদের সহ মহিলা শিল্পীরা সরব হয়েছেন,তারা ফোরাম গঠন করেছেন, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও আবেদন করেছেন সুরক্ষার দাবীতে। অথচ আমি জানি এবং অনেকেই জানেন কেশসজ্জা শিল্পীদের সাথে নানান অবিচার বহূবছর ধরে ঘটে চলেছে সংগঠন নামক রাজনৈতিক রক্ষক ঢালের আড়ালে এবং তার কোনো প্রতিবাদ হয় না। এ ইন্ডাস্ট্রিতে যেহেতু কেশসজ্জা শিল্পীদের কাজের সাথে মহিলা শিল্পীরা ওতোপ্রতো ভাবে জড়িত তাই তারা এবং আমরা পুরুষ শিল্পীরা বহু বছর ধরে জানি এই কাজের নামে এই সাংগঠনিক দাদাগিরির কথা। আজ যারা নিজেদের সুরক্ষার জন্য দাবীর জন্য সরব হয়েছেন এবং আমাদের মতন যারা সেই দাবীকে সম্পূর্ন সর্মথন জানিয়েছেন তাদের প্রত্যেকের উচিত মহিলা কেশসজ্জা শিল্পী … (নাম গোপন রাখা হল) আর তার মতন আরো অজস্র শিল্পীর প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদে এগিয়ে আসা।’
(আরও পড়ুন: নাতাশার সঙ্গে ডিভোর্সের পর ছেলে অগস্ত্যর সঙ্গে প্রথমবার দেখা হার্দিকের, কোথায় গেলেন, কী কী করলেন বাপ-বেটায়?)
তথাগত আরও লিখেছেন, ‘এ দায় আসলে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের সুরক্ষার দায়,এ দায় মানুষ হওয়ার দায়,এ দায় রাজনৈতিক ছাতার তলায় গড়ে ওঠা সংগঠনের কালো পাঞ্জা থেকে বাংলা সিনেমাকে মুক্ত করার দায়।বাংলা সিনেমা শুধুমাত্র প্রযোজক পরিচালক আর অভিনেতা নির্মান করে না, তার সাথে জড়িয়ে থাকে অসংখ্য টেকনিশিয়ান শিল্পীর রক্ত আর ঘাম। এতদিন যে দায় আমরা এড়িয়ে এসেছি এই বলে যে এটা তো ওদের সংগঠনের বিষয়, ওখানে খুব নোংরা পলিটিক্স হয়।…(নাম গোপন রাখা হল) আত্মহননের চেষ্টা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সংগঠনের নোংরা রাজনীতি থেকে বাংলা সিনেমা এবং তার সাথে জড়িত মানুষদের রক্ষা করতে হলে আপনারা যারা কর্মক্ষেত্রে মহিলা সুরক্ষা নিয়ে প্রতিবাদ করেছেন, আমরা যারা সর্মথন করেছি তাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সবসময় শিকারী শুধু গোয়েন্দা সিনেমার পরিচালকের মতন নির্দিষ্ট কোনA মানুষ হয় না কখনো কখনো নেকড়ের পালও দল বেঁধে শিকার করে। তাই কথা বলুন নচেৎ আপনার কথা বলার অধিকারও শিগগির হারিয়ে যাবে।’
এমনকি আত্মহত্যার চেষ্টার আগে কেশসজ্জা শিল্পী যে সুইসাইড নোটটি রেখে গিয়েছিলেন, সেটিও সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রসঙ্গত, কেশসজ্জা শিল্পীর আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় ইতিমধ্যেই হরিদেবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ওই কেশসজ্জা শিল্পী এই মুহূর্তে বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
জানা যাচ্ছে, কাজ হারিয়ে দীর্ঘদিন হতাশায় ভুগছিলেন ওই কেশসজ্জা শিল্পী। শেষ পর্যন্ত তিনি আত্মহত্যার করা চেষ্টা করেন বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার। শনিবার রাত আটটা নাগাদ বাড়ির বাথরুম ঢুকেছিলেন ওই হেয়ার ড্রেসার। কিন্তু, দীর্ঘক্ষণ না বেরোনোয় সন্দেহ হয় মেয়ে অঙ্কিতার! দরজার কাছে যেতে কেরোসিনের গন্ধ পায় তিিন, এরপরই অঙ্কিতা দরজা ভেঙে উদ্ধার করেন মাকে।