গত বছর, আরজি কর মেডিকেল কলেজের এক তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা বাংলা তথা সমগ্র দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল, প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ডাক্তার থেকে সাধারণ মানুষ। ঘটনায় দুই অভিযুক্ত, অভিজিৎ মণ্ডল (টালা থানার প্রাক্তন ওসি) এবং আরজি কর-এর প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে ঘিরে তোলপাড় হয় রাজ্য থেকে দেশ। সেই হাইপ্রোফাইল আরজি কর কাণ্ডের দশ মাস অতিবাহিত। এবার কোর্টে জমা পড়ল সিবিআই-র চতুর্থ স্টেটাস রিপোর্ট।
অবশেষে মঙ্গলবার, সিবিআই শিয়ালদহ আদালতে তাদের চতুর্থ স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিয়েছে। আদালতে, বিচারক সিবিআইকে পূর্ববর্তী রিপোর্টে জিজ্ঞাসাবাদ করা ৩৬ জনের রেকর্ড দেখাতে বলেন। এদিকে, মৃত তরুণী চিকিৎসকের আইনজীবী এই রিপোর্টে অসন্তুষ্ট। সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে 'শব্দের খেলা' খেলার অভিযোগ এনেছেন তিনি। মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাঁর দাবি, নতুন আপডেট দেওয়ার পরিবর্তে পুরানো রিপোর্টের কিছু অংশ কপি-পেস্ট করা হচ্ছে, যার কোনও বাস্তব অগ্রগতি নেই।
আইনজীবীদের দাবি, সিবিআই বারবার বলে যে তারা 'সিসিটিভি ফুটেজ চেক করছে' এবং 'তথ্য যাচাই করছে', কিন্তু কোনও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। আইনজীবীরা আরও উল্লেখ করেছেন যে সিবিআই সময়মতো চার্জশিট দাখিল করতে ব্যর্থ হওয়ায় দুই প্রধান অভিযুক্ত জামিন পেয়েছেন ইতিমধ্যেই, যদিও আগে তারা দাবি করেছিলেন যে সিবিআইয়ের কাছে শক্তিশালী প্রমাণ আছে। আইনজীবীরা প্রশ্ন তোলেন যে যদি কোনও দৃঢ় প্রমাণ না থাকে তবে অভিযুক্তদের কেন ৯০ দিন ধরে হেফাজতে রাখা হয়েছিল!
উল্লেখ্য, নির্যাতিতার পরিবার শুরু থেকেই সিবিআইয়ের তদন্তে অসন্তুষ্ট। এর আগে, শুধুমাত্র একজন অভিযুক্ত, সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, কিন্তু নির্যাতিতার বাবা মায়ের দাবি,এ ঘটনায় অন্যরাও জড়িত। আর সিবিআই ফেব্রুয়ারি থেকে স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দিচ্ছে, কিন্তু নির্যাতিতার পরিবারের দাবি তাঁরা সঠিক আপডেট পাচ্ছেন না।
এ প্রসঙ্গে সিবিআই আইনজীবী জানান যে তারা এখনও তদন্ত করছেন। মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলিও যাচাই করা হচ্ছে। এমন সময় এই বিচারক বলেন, ‘'রিপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে এই মর্মে আদালতে আবেদন করুন। আদালত সেই মতো অর্ডার করবে।’ জানা যাচ্ছে, পরবর্তী স্ট্যাটাস রিপোর্ট আগামী ১৬ জুলাই জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
যদিও বিচারক এদিন সিবিআইকে সতর্ক করে বলেন, 'শুধু রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা যথেষ্ট নয়। একজন সরকারি ডাক্তারকে তাঁর কর্মক্ষেত্রে হত্যা করা হয়েছে। আপনাকে এটি গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে।' এদিকে নির্যাতিতার পরিবার বিচার দাবি করে চলেছে, কেন মামলা এত ধীর গতিতে এগোচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্নও তোলা হচ্ছে।