রক্তের কোনও জাত হয় না! হয় না কোনও সম্প্রদায়। তাই বিজ্ঞানসম্মতভাবে 'গ্রুপ' মিলে গেলে মুসলিমের রক্ত অনায়াসে হিন্দুর ধমনীতে প্রবাহিত হয়। উলটোটাও ঘটে বইকী! কোনও রাজনীতি, কোনও কূটনীতির ক্ষমতা নেই রক্তের এই 'দম'কে চ্যালেঞ্জ করার! আরও একবার এই চিরন্তন সত্যের প্রমাণ দিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দুই যুবক। অচেনা, অজানা, অদেখা হিন্দু বৃদ্ধকে শুধুমাত্র রক্তদান করার জন্য ৩৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার রাস্তা উজিয়ে গেলেন তাঁরা! ভারী বা নাটুকে গলায় কোনও ভাষণ না দিয়েই মনে করিয়ে দিলেন এই বাংলার মাটি আদতে সম্প্রীতির মাটি।
সংবাদমাধ্যমের হাতে আসা তথ্য বলছে, ৭২ বছরের অরবিন্দ দে নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানার উদয়চন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর পুত্রবধূ শ্রাবণী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁর শ্বশুরের রক্তেন গ্রুপ - ও পজিটিভ। হঠাৎই ওই বৃদ্ধ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। জানা যায়, তাঁর শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা মারাত্মক হারে কমে গিয়েছে।
এই অবস্থায় কৃষ্ণনগরের শক্তিনগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় অরবিন্দকে। চিকিৎসকরা জানান, বৃদ্ধের প্রাণ বাঁচাতে হলে অবিলম্বে অন্তত দু'বোতল (২ ইউনিট) রক্ত তাঁকে দিতেই হবে। কিন্তু, গত শনিবার (১২ এপ্রিল, ২০২৫) নানা জায়গায় দৌড়েও ও পজিটিভ গ্রুপের রক্ত জোগাড় করতে পারেননি অরবিন্দের বাড়ির লোকেরা। এমন একটি দুঃসময় তাঁরা একটি এমার্জেন্সি ব্লাড ডোনেশন গ্রুপের সন্ধান পান। যোগাযোগ করা হয় সেই গ্রুপের সঙ্গে।
সেই গ্রুপের মাধ্যমেই মহম্মদ হাসমাতুল্লা শেখ এবং জাহাঙ্গির আলম জানতে পারেন, এক বৃদ্ধের অবিলম্বে রক্তের প্রয়োজন। তাঁরা সেই বৃদ্ধের জাতের খোঁজ নেননি। বদলে, রবিবার (১৩ এপ্রিল, ২০২৫) সকাল হতেই তাঁরা তাঁদের বাড়ি থেকে রওনা দেন কৃষ্ণনগরের উদ্দেশে। প্রথমজনকে আসতে হয় ৫০ কিলোমিটার দূর থেকে! আর দ্বিতীয়জনকে পাড়ি দিতে হয় ৩৫ কিলোমিটার পথ।
রবিবারই এই দুই মুসলিম যুবক হিন্দু প্রবীণ অরবিন্দ দে-কে একবোতল করে মোট দু'বোতল রক্ত দান করেন। রক্ত শরীরে প্রবেশ করতেই ক্রমে সুস্থ হয়ে ওঠেন অরবিন্দ। ভিনধর্মী দুই সহনাগরিকের কাছ থেকে এমন আত্মীয়তা পেয়ে আপ্লুত দে পরিবার। তাঁরা বলছেন, এই সাহায্য কোনও দিনও ভুলবেন না তাঁরা। চিরদিন ওই দুই যুবকের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবেন।
একদিকে, সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে হিংসার আগুন ছড়িয়ে পড়েছে মুর্শিদাবাদে। সেই হিংসা মানুষের প্রাণ যেমন কেড়েছে, তেমনই অসংখ্য মানুষকে ভিটেমাটি ছাড়তেও বাধ্য করেছে। সেই প্রেক্ষাপটে কৃষ্ণনগরের এই ঘটনা সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং একান্ত কাঙ্ক্ষিত ছবি তুলে ধরল।