চারিদিকে গাছে ঘেরা। একটা শান্ত–স্নিগ্ধ পরিবেশ। মাথার উপর বিস্তৃত নীল আকাশ। হালকা হাওয়া রয়েছে। সেখানেই দাঁড়িয়ে নানা কথা ভাবছেন তিনি। আবার প্রকৃতির সৌন্দর্যও দেখছেন। কখনও হাসছেন, কখনও চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন। আবার কখনও মেজাজের সঙ্গে বসে আছেন চেয়ারে। হ্যাঁ, তিনি মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ ইউসুফ পাঠান। একাকী দাঁড়িয়ে বাংলার প্রকৃতির মনোরম বিকেল উপভোগ করছেন। এমনই ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন সাংসদ তথা প্রাক্তন ভারতের ক্রিকেটার। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবি পোস্ট হওয়ার পরই আক্রমণ করলেন নেটাগরিকরা। সেখানে অনেকেই প্রশ্নবাণ ছুঁড়েছেন, ‘মুর্শিদাবাদের খবর আপনি রাখেন?’
কদিন ধরেই মুর্শিদাবাদ, সামশেরগঞ্জ, জঙ্গিপুর, সূতি–সহ নানা এলাকায় পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পাশ করা ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদেই এমন পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এমনকী এই পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন এই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার ভিত্তিতেই আধা সামরিক বাহিনী নামাতে হয়েছে ধূলিয়ানে। রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার সেখানে আছেন। আর এখানে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছে। এখানে চলেছে গুলি। এখানেই জনরোষের জেরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটেছে। সেখানে ইনস্টাগ্রামে চায়ের পোস্ট করেন ইউসুফ পাঠান। তিনটি ছবি পোস্ট করেন তিনি। তার সঙ্গে লেখেন— ‘ফুরফুরে বিকেল, সুন্দর চা আর শান্ত পরিবেশ। মুহূর্তের সঙ্গে মিশে যাচ্ছি।’ পোস্টের সঙ্গে একটি ইংরেজি গানও জুড়েছেন।
আরও পড়ুন: টানা ছুটিতে উপচে পড়েছে ভিড়, সমুদ্রসৈকতে দেদার আনন্দ, দিঘায় হোটেলগুলি ভর্তি
বহরমপুরের পাঁচবারের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীকে পরাজিত করে জিতেছেন ইউসুফ পাঠান। এখানে বেশ কিছু কাজও শুরু করেছেন সাংসদ হিসাবে। কিন্তু এমন উত্তপ্ত বাতাবরণে এমন ছবি দেওয়ায় নেটাগরিকরা বলছেন, গ্রামবাংলার সঙ্গে ‘একাত্ম’ হতে পারেননি পাঠান। তাই এমন পোস্ট। আবার কিছু অংশ বলছেন, উত্তপ্ত অবস্থাকে হালকা করার জন্যই এমন পোস্ট করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদ থেকে ইউসুফ অনেক দূরে আছেন বলেও সমালোচনা ধেয়ে এসেছে। আর এই বিষয়ে রাজ্যসভার বিজেপির সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘ইউসুফ পাঠান কে? একজন ক্রিকেটার। কোনও রাজনীতিক নন। তাঁকে বহরমপুরে তৃণমূল কংগ্রেস কেন টিকিট দিয়েছিল? শুধু তাঁর ধর্মীয় পরিচয়টাকে ব্যবহার করার জন্য। তাই ইউসুফের সঙ্গে রাজনীতির বা মুর্শিদাবাদ জেলার সাধারণ মানুষের জীবনের কোনও সম্পর্ক নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়া ছবি থেকেই সেটা পরিষ্কার।’
সামান্য তিনটি ছবি পোস্ট নিয়ে এখন রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে। বিশেষ করে বিজেপি এটাকে ইস্যু করে ফায়দা তুলতে চাইছে বলে মনে করে তৃণমূল কংগ্রেস। ইতিমধ্যেই বিজেপির ভুয়ো ছবি পোস্ট ধরা পড়েছে। পুলিশ তা প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে। তবে এত কাণ্ড হলেও ইউসুফ কোনও আক্রমণ করেননি বিরোধীদের। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘মালদা–মুর্শিদাবাদে অশান্তির আবহে তৃণমূলের সাংসদ চায়ে চুমুক দেওয়ার ছবি পোস্ট করছেন! বাঙালিদের প্রতিনিধি হিসাবে বহিরাগতদের আনলে এটাই হয়। লজ্জাজনক।’ অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘এগুলি নিয়ে মন্তব্য করার রুচিবোধ আমার নেই।’ তৃণমূল কংগ্রেস সরাসরি কোনও আক্রমণে যায়নি।