Sujali Patra: জন্মের ১১ দিন পরেই মৃত্যু হয়েছে মায়ের। একরত্তি শিশুকে রেখে চলে গিয়েছিলেন বাবা। সেই থেকে দিদা আর মামার কাছে মানুষ সুজলি। সুজলি পাত্র। চন্দননগরের বাসিন্দা এই কিশোরীর লড়াইটা শুরু হয়েছিল জন্মলগ্ন থেকেই। মা-বাবাকে হারিয়ে ছোট থেকে বড় হওয়া। বর্তমানে শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যানসার। জীবনের প্রতি পদে পদে যুদ্ধ করতে হলেও ক্লান্ত নয় সে। বরং অদম্য জেদেই এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে বসে সুজলি পাত্র।
মাধ্যমিকের সময় ক্যানসার
বছর দুই আগের ঘটনা। মাধ্যমিক শেষ হওয়ার পর ক্লাস ইলেভেনের পড়াশোনার প্রস্তুতি শুরু করছিল চন্দননগরের এই কিশোরী। হঠাৎই একদিন পেটে প্রচণ্ড ব্যথা। শুরু হল পরীক্ষানিরীক্ষা। ওভারি অর্থাৎ ডিম্বাশয়ে ধরা পড়ল ক্যানসারের টিউমার। চিকিৎসক জানালেন, ওভারিতে ক্যানসার হয়েছে। এরপর শুরু হয় যন্ত্রণাদায়ক চিকিৎসা। নীলরতন সরকার হাসপাতালে চিকিৎসা হয় সুজলির।
আরও পড়ুন - দেশ জুড়ে এবার কমতে পারে রেল দুর্ঘটনা! বিশেষ রোবট বানাল খড়গপুর IIT, কী কাজ করবে
কেমোথেরাপি নিতে হয়েছিল পরীক্ষার সময়
ক্যানসারের চিকিৎসা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। শরীরের উপর হাজার ধকল। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও মনের জেদ হারাননি সুজলি। ওই অবস্থাতেই ক্লাস ইলেভেনের কঠিন পড়া মুখস্থ, পরীক্ষা দেওয়া। অবশেষে একের পর এক কেমো নিতে নিতে জীবনের আরেক বড় পরীক্ষা উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য প্রস্তুত হওয়া। সব ঠিক থাকলে ২০২৪ সালেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল সুজলির। কিন্তু সেই সময় কেমো শুরু হওয়ায় কিশোরীর পক্ষে পরীক্ষায় বসা সম্ভব হয়নি। চলতি বছর অনেকটা পরিস্থিতি সামলে সে পরীক্ষায় বসেছে। তা সত্ত্বেও বাংলা ও ইংরেজি পরীক্ষা দেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। হাসপাতালে ভর্তিও করতে হয়। স্কুল উচ্চশিক্ষা দফতরের সহায়তায় সেখান থেকেই পরীক্ষা দিয়েছেন সুজলি।
আরও পড়ুন - অফিসের চাপ ভ্যানিশ হবে! রইল দিনের সেরা ৫ মজার জোকস, পড়ে নিন চটজলদি
ক্যানসারের যন্ত্রণা নিয়েই পরীক্ষা
চন্দননগরের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কেএমডিএ পার্কের বাসিন্দা সুজলি। দিদা মারা যাওয়ার পর তাঁর মামাই এখন তাঁর ভরসা। সংবাদ মাধ্যমকে সুজলি বলেন, ইংরেজি পরীক্ষার দিন পেটে ভীষণ যন্ত্রণা শুরু হয়। তখন কষ্ট সামলে পরীক্ষা দেন কোনোক্রমে। কিন্তু পরীক্ষা শেষেই হাসপাতাল দৌড়াতে হয়। হাসপাতালে বই নিয়ে যেতে পারেননি সুজলি। বন্ধুরাই ফোনে ছবি তুলে দিয়ে পড়তে সাহায্য করেছেন।
সুজলির স্বপ্ন
সুজলির মামার কথায়, স্কুলের প্রধান শিক্ষিকায় এনআরএস হাসপাতালে বসে পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গেই পরীক্ষা দিয়েছে। শরীর যদিও দুর্বল কিন্তু মন নয়। শক্ত মনে এখন সুজলির একটাই স্বপ্ন। বড় হয়ে শিক্ষিকা হতে হবে তাঁকে।