গত বছর একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জমা থাকা প্রায় ১ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা তোলার অভিযোগ আগেই সামনে এসেছে। সেই থেকেই দুর্নীতির গন্ধ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছিল রাজ্য পুলিশ ও সিআইডি। এবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক কেলেঙ্কারির পর্দাফাঁস করতে তদন্তে নামল কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
আরও পড়ুন: বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকনোলজির হস্টেলে র্যাগিং, রড দিয়ে মারধর, ধৃত ২
জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা রুজু করেছে ইডি। তারা এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী আমানতের অর্থ যে ব্যাঙ্কে রাখা ছিল, সেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের জোনাল ম্যানেজারের কাছে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে ইডি। ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ওই ব্যাঙ্কের তিন জন আধিকারিকের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির বিবরণ জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও, ইডির দফতরে ব্যাঙ্কের অফিসারদের ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী আমানত প্রকল্পের অন্তত তিনটি অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে ইডি। ওই সব অ্যাকাউন্ট থেকে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই টাকা তোলার বিষয়ে কারা অনুমোদন দিয়েছিলেন, সেই বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে ব্যাঙ্কের স্টেশন বাজার শাখায় টাকার স্থানান্তরের সময় সার্কেল হেড ও ডেপুটি সার্কেল হেড কারা ছিলেন।
উল্লেখ্য, ঘটনার সূত্রপাত ২০২৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে থাকা একটি স্থায়ী আমানতের টাকা সময়ের আগেই তুলে নেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কে একটি চিঠি জমা পড়ে। সেখানে নির্দেশ দেওয়া হয় টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেভিংস অ্যাকাউন্টে নয়, বরং একটি বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থার অ্যাকাউন্টে জমা দিতে হবে। সন্দেহ হওয়ায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং সেখান থেকে জানানো হয়, এমন কোনও চিঠি তাঁরা পাঠাননি। এরপরই বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের হয় এবং তদন্তে নামে পুলিশ।
তদন্তে উঠে আসে, টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে না ঢুকে অন্যত্র চলে যায়। সেই পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৯৩ লক্ষ ৮৯ হাজার ৮৭৬ টাকা। পরে রেজিস্ট্রার নিজে থানায় নতুন করে অভিযোগ জানান। পুলিশ ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মীকে গ্রেফতার করেছে । সিআইডি এই মামলায় চার্জশিট পেশ করেছে। চার্জশিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স দফতরের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভক্ত মণ্ডল সহ মোট ১০ জনের নাম রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন এখনও পলাতক। তাছাড়া, তিন জন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আধিকারিকের নামও চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কর্মীদের একাংশ মনে করছেন, ইডির তদন্তের মাধ্যমে এই দুর্নীতির নেপথ্যের প্রকৃত রাঘববোয়ালদের মুখোশ উঠে আসবে।