চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে সেলফি তোলার চেষ্টাই শেষপর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়াল দুই তরুণের কাছে। মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জ ও ভগবানগোলা স্টেশনের মাঝামাঝি মাইলবাসা এলাকায় ঘটে গেল এক মর্মান্তিক ঘটনা। রেললাইনের ধারে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে গিয়ে লালগোলা প্যাসেঞ্জার ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হল দুই বন্ধুর। ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোকের ছায়া নেমেছে।
আরও পড়ুন: পূর্ব বর্ধমানে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু একই গ্রামের ২ মহিলার, ঘনীভূত হচ্ছে রহস্য
জানা গিয়েছে, মৃত দুই বন্ধুর নাম আমজাদ শেখ (১৭) ও সাহাবুল শেখ (১৮)। দু’জনেই মুর্শিদাবাদ থানার অন্তর্গত আইসবাগ টিকটিকিপাড়ার বাসিন্দা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইদের ছুটিতে সাহাবুল তাঁর মাসির বাড়ি মাইলবাসা গ্রামে বেড়াতে আসে। সঙ্গে নিয়ে আসে তার বন্ধু আমজাদকেও। বাড়ির পাশ দিয়েই গিয়েছে রেললাইন। আর সেখানেই মঙ্গলবার রাতে ঘটে বিপত্তি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বহরমপুর থেকে ছেড়ে আসা দ্রুতগতির ট্রেন জিয়াগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল সেইসময়। ট্রেন আসতে দেখে রেললাইনের একেবারে ধারে দাঁড়িয়ে মোবাইলে সেলফি তুলছিল দুই বন্ধু। সেইসময় ট্রেনের ধাক্কায় দুজনকেই বহু দূরে ছিটকে পড়েন। সাহাবুল ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। গুরুতর আহত আমজাদকে প্রথমে স্থানীয় কানাপুকুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়, পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়। কিন্তু হাসপাতাল পৌঁছানোর আগেই রাস্তাতেই তার মৃত্যু হয়।
ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে আসে বহরমপুর জিআরপির একটি দল। ওসি প্রবীর দে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘চলন্ত ট্রেনের সামনে সেলফি তুলতে গিয়ে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সকলকেই এমন ঝুঁকিপূর্ণ প্রবণতা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে দুই পরিবারে। গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, তিনি ট্রেন আসতে দেখে দুজনকে চিৎকার করে সাবধান করার চেষ্টা করেন। কিন্তু, তার আগেই ট্রেন তাদের ধাক্কা মারে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন মনোবিদরা। তাঁদের বক্তব্য, বর্তমানে অনেক তরুণ-তরুণী মোবাইল ও সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য সেলফি তোলাকে জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করছে। কিন্তু রেললাইনের মতো বিপজ্জনক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছবি তোলার ঝুঁকি কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রশাসন ও পুলিশের তরফে আবেদন জানানো হয়েছে, কোনও অবস্থাতেই রেললাইনের ধারে দাঁড়িয়ে যেন ছবি তোলার চেষ্টা না করা হয়।