সন্তানের জন্য ছুটির (চাইল্ডকেয়ার লিভ) আবেদন করেছিলেন ঝাড়খণ্ডের এক মহিলা বিচারক। কিন্তু আদালতে তা মঞ্জুর হয় আংশিকভাবে। আর এই কারণেই তাঁর বার্ষিক রিপোর্টে নেতিবাচক মন্তব্যও যোগ করা হয়।যা একপ্রকার পরোক্ষ শাস্তির ইঙ্গিত বলেই ধরা হচ্ছে। ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টের এই ঘটনায় প্রবল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। (আরও পড়ুন: ডিএ মামলায় নয়া মোড়, ২৫% বকেয়া মেটাবে না সরকার? নয়া পদক্ষেপ রাজ্যের)
আরও পড়ুন: ১২০০ BSF জওয়ানকে নিয়ে যেতে নোংরা ট্রেন পাঠাল রেল,সাসপেন্ড আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের ৪
জানা গেছে, ঝাড়খণ্ডের এক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা মহিলা বিচারক সিঙ্গল মাদার হিসেবে সন্তান প্রতিপালন করছেন। তিনি আদালতে তাঁর কর্মজীবনে বরাদ্দ ৭৩০ দিনের মধ্যে ৬ মাসের ছুটির আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ঝাড়খণ্ড হাইকোর্ট তাঁর আবেদন আংশিকভাবে মঞ্জুর করে ৯২ দিনের ছুটি অনুমোদন করে।ওই বিচারকের যুক্তি, তিনি তাঁর সন্তানের পরীক্ষার সময় হিসেব করে নির্দিষ্ট সময়ে ছুটি চেয়েছিলেন, কিন্তু তার বদলে তাঁকে একটানা কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে। এরপরে তিনি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন।শীর্ষ আদালতে বিচারপতি প্রশান্ত কুমার মিশ্র এবং বিচারপতি মনমোহনের বেঞ্চ শুনানি হয় মামলাটির। কিন্তু বিচারপতিরা জানান, এই বিষয়টি যদি শীর্ষ আদালত থেকে নিষ্পত্তি হয়, তাহলে সেটা ভবিষ্যতে নজির হয়ে দাঁড়াতে পারে। দেশের জেলাস্তরের বিচারব্যবস্থাতেও প্রভাব ফেলতে পারে। মনে হতে পারে, এই বিষয়ের নিষ্পত্তি নিম্ন স্তরে সম্ভব নয়। তাই আগে ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টকেই বিষয়টি পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দেওয়া হয়। (আরও পড়ুন: পাক সেনা প্রধান মুনিরকে আমেরিকার আমন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কংগ্রেস সাংসদ)
আরও পড়ুন-গাড়ি থেকে বেরোচ্ছে দুর্গন্ধ! সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারের মৃত্যুতে শোরগোল
কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে ওই মহিলা বিচারকের আইনজীবী জানান, ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টে এই আবেদন দাখিলের পরে তাঁর মক্কেলের বার্ষিক রিপোর্টে ‘পারফরম্যান্স কাউন্সেলিং’ বা 'কাজের ক্ষমতা বাড়ানো'র পরামর্শ দেওয়ার সুপারিশ লেখা হয়। অর্থাৎ, তাঁকে আরও দক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা একপ্রকার পরোক্ষ শাস্তির ইঙ্গিত বলেই ধরা হচ্ছে।এই বিষয়ে বিচারকের পক্ষে মামলায় বলা হয়েছে, এই মহিলা বিচারকের আবেদন কোনও যুক্তি ছাড়াই ‘যান্ত্রিকভাবে’ খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ একই ধরনের আবেদন অপর এক বিচারকের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট মঞ্জুর করেছে। ফলে এখানে সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের (সমতা অধিকারের) লঙ্ঘন ঘটেছে। (আরও পড়ুন: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে 'অভূতপূর্ব অংশীদার' পাকিস্তান, দাবি US জেনারেলের)
এই মামলায় ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টের তরফে সুপ্রিম কোর্টে জানানো হয়েছে, বিচারকের আবেদন তারা পুনর্বিবেচনা করেছে এবং ৯২ দিনের ছুটি দিয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত ছুটি দিলে তা নজির হয়ে যাবে এবং এতে জেলাস্তরের বিচারব্যবস্থায় প্রভাব পড়বে।বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের তরফে ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টকে এ বিষয়ে নতুন করে নোটিস দেওয়া হয়েছে। ৪ সপ্তাহ পর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
আরও পড়ুন: রাজার খুনিদের টাকা দেওয়া হয় জিতেন্দ্র রঘুবংশীর অ্যাকাউন্ট থেকে, কে সেই ব্যক্তি?
অন্যদিকে ওই মহিলা বিচারক জানিয়েছেন, তিনি সমাজের নিচু স্তর থেকে উঠে এসেছেন এবং সন্তানের একক অভিভাবক। তাঁর কর্মজীবনের মাত্র আড়াই বছরে তিনি ৪০০০টিরও বেশি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। এই পরিষেবাকে 'চমকপ্রদ' বলেই মনে করেন তিনি। তারপরেও তাঁর প্রতি এমন বৈষম্যমূলক আচরণ অবিচার বলেই তাঁর দাবি।ওই বিচারকের আবেদনে বলা হয়েছে, তিন বছর হজারিবাগের আদালতে কাজ করার পরে তিনি ছেলের পড়াশোনার কথা ভেবে রাঁচি বা বোকারোতে বদলির আবেদন করেন। কারণ ওই শহরগুলোতে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পড়ার ভাল সুযোগ রয়েছে। তাঁর ছেলে মার্চ মাসে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছিল। কিন্তু সেই আবেদন মঞ্জুর না করে তাঁকে বদলি করে দেওযা হয় দুমকা আদালতে। হাজারিবাগ থেকে আরও ২৩০ কিলোমিটার দূরে।