বেশি পরিমাণে ভিউ পেতে, অনলাইনে টাকা ইনকামের জন্য নিজের সন্তানের সঙ্গেই খারাপ কর্মকান্ড করতেন 'ক্রিম আপা'। আসল নাম শারমিন শিলা। অভিযোগ উঠেছে, ক্যামেরার সামনে নিজেরই সন্তানকে এনে নানাভাবে নিষ্ঠুর আচরণ করতেন তিনি। এমনই অভিযোগে বুধবার রাত ১১টা ৪৫ এর দিকে আশুলিয়া থানায় শিশু আইন অনুযায়ী দায়ের করা হয়েছে মামলা। সাভারই এক কর্মকর্তা ওই মামলা দায়ের করেছেন বলে জানা গিয়েছে। এই মামলায় ঢাকার সাভারের অভিযুক্ত ‘ক্রিম আপা’কে গ্রেফতার করেছে আশুলিয়া থানার পুলিশ।
৩০ মার্চ নিজের ফেসবুক আইডিতে বিকেল ৪টের দিকে শারমিনের একটি পোস্ট বেশ ভাইরাল হয়। ভিডিয়োতে দেখা যায়, শারমিন শিলা নিজের প্রায় ২ বছরের ছোট মেয়েকে জোর করে কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন শিলা। এক হাতে দিয়ে মুখে চাপ দিচ্ছেন। তারপর জোর করে হাঁ করান তাকে। রীতিমত ছোট মেয়েটির অসম্মতিতেই কেকজাতীয় কিছু খাওয়ার খেতে বাধ্য করেন শিলা। বলা হচ্ছে, শুধুমাত্র তিনি ভাইরাল হওয়ার জন্য, আরও মোটা অঙ্কের অনলাইন উপার্জনের তাগিদে বিগত এক বছর ধরে একই ধরনের কাজ করে চলেছেন শারমিন শিলা। দুই সন্তানের প্রতি মায়ের মতো আচরণ তো দুরস্ত। তাদের আঘাত, অবহেলা করেন, তাদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করেন। এ ধরনের আচরণের কারণে স্বাভাবিকভাবেই তাঁর সন্তানেরা শারীরিক ও মানসিকভাবে গুরুতর সমস্যায় পড়েছে।
ক্যামেরার সামনে সন্তানকে দিয়ে কী কাজ করাতেন 'ক্রিম আপা'
সূত্রের খবর, সাভার আশুলিয়ায় বসবাসকারী শারমিন শিলা পেশায় একজন বিউটিশিয়ান। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি ক্রিম আপা। মেকআপ সংক্রান্ত কাজ করেন। সাভারের বাইপাইল এলাকায় ‘ক্রিম আপা বিউটি পারলার’ নামে শারমিন শিলার একটি বিউটি পারলারও আছে। বিভিন্ন ধরনের ক্রিমও তৈরি করে বিক্রি করেন। নিজের ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে অনলাইনে নানান ভিডিয়ো বানিয়ে পোস্ট করেন। যদিও গত ৩০ মার্চের পর থেকে ওই মহিলা পড়েছেন বিপাকে।
চুপচাপ বসে থাকেননি শিশু-সমাজসেবীরা। ৬ এপ্রিল ‘শিশুদের সুরক্ষায় একাই একশো’ নামের সামাজিক আন্দোলনের পক্ষে বাংলাদেশের নামি ব্যক্তিত্ব সাদাত রহমান ও অন্যরা ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘ক্রিম আপা’র বিরুদ্ধে স্মারকলিপি জমা দেন। প্রশাসকের কার্যালয় তিন দিনের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয়। এদিকে এই অভিযোগের ঘনঘটা দেখে থেকে থাকেনি বিউটিশিয়ান মহিলা। নিজের সন্তানদেরই ফের প্রকাশ্যে এনে জানান যে তিনি কখনোই তাদের নির্যাতন করেননি, কষ্ট দেননি, তাঁরা একসঙ্গে ভালো আছেন। নির্যাতন করলে তা ক্যামেরার সামনে করতেন না। তিনি ‘গুণী নারী’, তাই অন্যরা হিংসা করে এমন অভিযোগ তুলেছে। যদিও এই ভিডিয়ো আপলোড করে পরবর্তীতে কোনও অজ্ঞাত কারণে মুছেও ফেলেন অবশেষে।
যদিও সাদাত রহমানের দাবি, পরিবারসহ টিকটকে আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন ‘ক্রিম আপা’। সমস্যায় ছিল তাঁর সন্তানেরা। তাই এক স্থানীয়ের সাহায্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাভার সমাজসেবা কার্যালয়ে শারমিন শিলাকে আনা হয়েছিল। তাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে বোঝানো হয়। শেষে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে বলে জানা গিয়েছে।