২৪৯ বছর হাজতবাস করবেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাণীবিদ অ্যাডাম ব্রিটন। ৪০টি কুকুর কিনে, নির্মমভাবে তাদের ধর্ষণ, তারপর মর্মান্তিক হত্যার জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৫২ বছরের ব্রিটনকে। অবলা পশুর উপর পাশবিক অত্যাচার করার ৬০ টি অভিযোগ স্বীকারও করেছেন তিনি। তবে, এই ভয়ঙ্কর কাণ্ডে পিছনে দায়ী তাঁর প্যারাফিলিয়া রোগ। কী এই রোগ?
অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম এবিসির বলেছে, অ্যাডাম একজন ব্রিটিশ নাগরিক। অস্ট্রেলিয়ার ডারউইনে নিজের বাড়িতে কুকুরের ওপর মর্মান্তিক অত্যাচার করতেন তিনি। নিজের সমস্ত নোংরা কার্যকলাপ রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করতেন। এ সময় তিনি 'মনস্টার' নামের একটি প্রোফাইল ব্যবহার করতেন, যাতে কেউ তাকে চিনতে না পারে। কুকুরকে ধর্ষণ করার জন্য একটি 'টর্চার রুম'ও তৈরি করেছিলেন অ্যাডাম।
গুমট্রি অস্ট্রেলিয়া নামে একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মোট ৪২টি কুকুর কিনেছিলেন তিনি। কুকুর পোষার নামে, তিনি এই কুকুরগুলোকে একটি শিপিং কনটেইনারে রেখে দিতেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে অ্যাডাম ৩৯টি কুকুরকে ধর্ষণ করেছিলেন। ব্রিটিশ মিডিয়া মিরর অনুসারে, ২০২২ সালে একজন ব্যক্তি অ্যাডামের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার পর, পুলিশ তাঁর বাড়িতে এসে সবটা জানতে পেরেছিল। এর পরে, ২০২২ সালের এপ্রিলে পুলিশ আদমকে গ্রেপ্তার করে। ১১ জুলাই আদালতে শুনানির সময়, অ্যাডামের আইনজীবী তাঁর মানসিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে কম শাস্তির আবেদন করেছিলেন। আর এই মানসিক অবস্থাই ছিল প্যারাফিলিয়া।
প্যারাফিলিয়া রোগ আসলে কী
অ্যাডাম ব্রিটন প্যারাফিলিয়ায় ভুগছেন বলে মেডিকেল রিপোর্ট পেশ করতে গিয়ে আইনজীবী বলেছিলেন, এই রোগে ভিকটিম অনুমতি ছাড়া কারও সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা বেশিরভাগই শিশুদের টার্গেট করে। আরও বিশদে বললে, প্যারাফিলিয়া রোগে অস্বাভাবিক যৌন ইচ্ছা জন্মায়। এই অবস্থায়, সাধারণত চরম বা বিপজ্জনক কার্যকলাপ করে বসেন রোগী। পেডোফিলিয়া, স্যাডিজম এবং ফ্রোটিউরিজম সহ এমন কিছু প্যারাফিলিয়াগ রোগের কারণে ঘটে যাওয়া ঘটনা ফৌজদারি অপরাধের অধিনেও আসে।
আরও পড়ুন: (লেখক অমিতাভ ঘোষের মুকুটে নতুন পালক, ইউনিভার্সিটি অফ সিয়েনা থেকে মিলল স্বীকৃতি)
যাইহোক, তাঁর মানসিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে, গ্রেফতারের পর অ্যাডাম ৩০ ঘণ্টা মানসিক চিকিৎসাও দেওয়ার পর তিনি নিজের অপরাধের জন্য অনুতপ্ত বোধ করেছিলেন। প্রাণিবিদ অ্যাডাম বিবাহিত এবং তাঁর স্ত্রী ইরিন স্বামীর এই অপরাধ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। পেশায় বন্যপ্রাণী রেঞ্জার এবং জীববিজ্ঞানী হলেন, তাঁর স্ত্রী। ব্রিটেনের ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারে জন্মগ্রহণকারী অ্যাডাম ব্রিটন কুমির বিশেষজ্ঞ। তিনি বিবিসি এবং ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের সহযোগিতায় অনেক প্রকল্পে কাজ করেছেন। অ্যাডামকে ডিসকভারি চ্যানেল এবং অ্যানিমেল প্ল্যানেটের প্রোগ্রাম 'অ্যানিম্যাল ফেস-অফ'-এও দেখা গিয়েছে। অ্যাডাম ব্রিটেনের কুইন এলিজাবেথ গ্রামার স্কুল থেকে প্রাণিবিদ্যায় ডিগ্রি নিয়ে, পরে তিনি লিডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরও পড়াশোনা করেছিলেন।