গত মাস থেকেই একের পর এক পোস্টে বাংলাদেশের নানা অভ্যন্তরীন পরিস্থিতি সামনে আনছেন তসলিমা নাসরিন। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দেশজুড়ে যে অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন তিনি। বহুদিন হল নিজের দেশেই পা রাখেন না, মুসলিম মৌলবাদীদের চাপে তিনি ঘরছাড়া। লেখিকার অভিযোগ, বাংলাদেশ খুব শীঘ্রই নিজেকে মুসলিম দেশ হিসেবে ঘোষণা করবে। ইতিমধ্যেই নাকি সে দেশের হিন্দুদের বড় সব সরকারি পোস্ট থেকে চাকরি ছাড়ার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশের মধ্যে তৈরি হওয়া ভারত বিরোধ নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড়। এবার সেরকমই এক চিত্র সামনে আনলেন তসলিমাও। যেখানে দেখা যাচ্ছে, বন্যাত্রাণ হিসেবে খাবার জল পৌঁছে দিচ্ছেন একটি ছেলে। তবে লক্ষ্যনীয় হল তাঁর টি-শার্টে লেখা বার্তা। যেখানে দেখা যাচ্ছে, ‘আপনার সন্তানকে ভারত বিদ্বেষী বানান’। যদিও ‘বিদ্বেষী’ বানানটি ভুল। লেখা আছে ‘বিদ্ধেষী’।
আর এই বানান ভুলের প্রসঙ্গ এক নেট-নাগরিক তুলতেই, তসলিমা পালটা জবাব দিলেন, ‘তাহলে তো অথেন্টিক। বানান ঠিক হলে বরং সন্দেহ হত’! প্রসঙ্গত, এই পোস্টটির ক্যাপশনে আসলে লেখিকা লিখেছিলেন, ‘শিবিরের ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি! এই ছবিটা পেলাম। অথেনটিক নাকি ফেইক?’!
বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক পোস্ট করে চলেছেন তসলিমা। তিনি লেখেন, ‘প্রফেসর ইউনুস যদিও নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন এবং আরও হাজারো বিদেশি পুরস্কার পেয়েছেন, যদিও আমেরিকার সরকার ইউনুসকে খুব সম্মান করেন -- আমার কিন্তু ইউনুসকে খুব একস্ট্রাঅর্ডিনারি মানুষ বলে মনে হয়নি কখনও। চালাক মনে হয়েছে, কিন্তু বুদ্ধিদীপ্ত বা জ্ঞানী মনে হয়নি।’
সঙ্গে নিজের এই পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘তিনি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার পর আমার মনে হয়েছিল তিনি যেহেতু সেক্যুলার ইউরোপে ঘোরাঘুরি করেছেন অনেক, নারীবাদী আর মানবাধিকারবাদী সেক্যুলার নেতাদের সান্নিধ্যে এসেছেন, সেহেতু তিনি সেক্যুলারিজমে বিশ্বাস করেন, নারীর সমান অধিকার আর মানবাধিকারে বিশ্বাস করেন, এবং এসবই তিনি দেশে প্রতিষ্ঠা করবেন, জীবনের শেষ বয়সে দেশের জন্য ভাল কিছু করে যাবেন। ভেবেছিলাম দেশের একমাত্র নোবেল পুরস্কার, তাও আবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার, বিজয়ী হিসেবে, তিনি দেশে শান্তির ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা থাকাকালীন দেশ অশান্তির আগুনে পুড়লো, দেশে অশান্তির ধ্বংসযজ্ঞ চললো, তিনি এসব বন্ধ করার কোনও চেষ্টাই করলেন না, উল্টে তিনি বীভৎসতাকে বিজয় বললেন, অশান্তিকে শান্তি বললেন, উন্মত্ততাকে উৎসব বললেন। ইসলামী মৌলবাদীদের সঙ্গে তিনি একাকার হয়ে গেলেন। ওরাই আসলে তাঁর উপদেষ্টা। এবং তিনি তাদের আদেশ বা উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেন।’