যান্ত্রিকার যুগে বন্ধুত্ব, ভালোবাসা নিয়ে অকপট ঋদ্ধি সেন। লিখলেন, এই সভ্যতার নির্বাসনের মধ্যে হঠাৎ করে জুটে যায় কিছু মন, যা জ্বলে থাকে গ্লোসাইনের আলো ছাড়াই। হ্যামলেটের বিষাদের বাগানে জীবনের অর্থহীনতার অবসাদ মাখা নিষিদ্ধ ফল ভাগ করে খাওয়ার জন্য থেকে যা কেউ, থেকে যায় বন্ধু।’
বন্ধুত্ব, ভালোবাসা নিয়ে অকপট ঋদ্ধি
পৃথিবীটা এখন মুঠো ফোনে বন্দি, তার সঙ্গে বর্তমানের নতুন সংযোজন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এই সব নিয়ে একদল মানুষ এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে, পাশের মানুষটাকে দেওয়ার মতো সময় তাঁদের হাতে নেই। আর একদল এই যান্ত্রিকতার চাকায় পিষে যেতে যেতে প্রতিনিয়ত কোনঠাসা হয়ে পড়ছে। আসলে ভার্চুয়াল নয়, বরং এখন রক্ত-মাংসের একটা মানুষ, একটা বন্ধু এই সময় সকলের পাশে থাকা দরকার। যাঁর হাত ধরে পৃথিবী ভরা যান্ত্রিকতার মাঝেও এক টুকরো সবুজ শীতল ছায়া পাওয়া যায়। আর ফের নতুন করে সেই কথায় মনে করিয়ে দিলেন ঋদ্ধি সেন। তাঁর জীবনের সেই শান্ত শীতলছায়া সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের, ভালোবাসার কথাও লিখলেন।
সমাজমাধ্যমের পাতায় সুরঙ্গনার সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবি পোস্ট করে লিখলেন, ‘হ্যামলেট তার বিষাদের বাগানে দাঁড়িয়ে বলে উঠেছিল ‘Denmark’s a prison’, গোটা ডেনমার্ক তার চোখে একটা কয়েদখানা, রাজত্ব,রাজনীতি,সামাজিক মূল্যবোধ,প্রতিশোধ,শোক বন্ধুত্ব,প্রেম,সভ্যতার অগ্রগতি সব কিছুই ঘুরে চলেছে ওই ডেনমার্ক নামের জেলখানার বৃত্তে। আজ গোটা বিশ্বের তিন ভাগ জলের মাঝে ধুঁকতে থাকা অবশিষ্ট যেটুকু স্থল পড়ে আছে, তার সবটাই প্রায় পরিণত হয়েছে জেলখানায়। হ্যামলেটের স্রষ্টা বলে গেছিলেন যে গোটা পৃথিবীটাই একটা মঞ্চ আর আমরা সকলেই সেখানে ক্ষনিকের অভিনেতা। তবে এই একবিংশ শতাব্দীতে এই ঊক্তির এক আমূল পরিবর্তন ঘটেছে, ২০২৫শের বর্তমান এক বিশ্ব জোড়া ফাঁসিমঞ্চ, আর আমরা প্রত্যেকেই সেখানে কোনও না কোনও ভাবে ক্ষণিকের জল্লাদ। না, বাড়াবাড়ি মনে হলেও এটাই এক প্রকার সত্যি, এই অত্যাশ্চর্য গ্রহটার নিজস্বতা বিক্রি করে নিজেদের পরিচিতি তৈরি করার খেসারত দিতে হবে আমাদের সকলকেই। হোমো স্যাপিয়েন থেকে হোমো AI হওয়ার যাত্রায় আমাদের কথা ছিল স্বাধীন হওয়ার, হল তার উল্টো।’
ঋদ্ধি এই উল্টো পথের ভয়াবহ ফল নিয়েও লেখেন। তিনি লেখেন, ‘হোমো ইরেক্টাস খুঁজে পেলেন আগুন মার্কো পোলো খুঁজে পেলেন সভ্যতা, ব্রহ্মগুপ্ত, আর্যভট্ট শূন্যর মাধ্যমে খুঁজে পেলেন অসীম শূন্যতার চাবিকাঠি, মোজার্ট খুঁজে পেলেন সুর, আর আমরা খুঁজে পেলাম ট্রোল। এই ট্রোল শতাব্দী তৈরি করল আমাদের সভ্যতার সব চেয়ে অত্যাধুনিক জেলখানা, ‘পরিচিতির’ কারাগার, যেখানে আমরা একাধারে জেলার এবং কয়েদি উভয়েই, নিজেদের তৈরী করা পরিচিতির গন্ডির বাইরে কেউ পা রাখলেই সে আমাদের সার্ভারে ‘ক্যানসেল’। আমরা চিরকালের মতো বিশ্বের সার্ভার থেকে ক্যানসেল হয়ে যাওয়ার আগে থেকে যাব এই পরিচিতি মাফিয়ার কয়েদখানায়, তবে এই সভ্যতার নির্বাসনের মধ্যে হঠাৎ করে জুটে যায় কিছু মন, যা জ্বলে থাকে গ্লোসাইনের আলো ছাড়াই। হ্যামলেটের বিষাদের বাগানে জীবনের অর্থহীনতার অবসাদ মাখা নিষিদ্ধ ফল ভাগ করে খাওয়ার জন্য থেকে যা কেউ, থেকে যায় বন্ধু।’
হ্যাঁ, বন্ধুই হতে পারে আশ্রয়ের স্থল, যে সঙ্গে থাকলে তেতোটুকুও সহ্য করে নেওয়া যায়। সে কথায় যেন অভিনেতার লেখার ছত্রে ছত্রে। তাঁর মতে, ‘কোনও এক দুপুরবেলার মিঠে রোদ এসে পড়ে ছিল আমাদের অপরিণত শরীর আর মনে, সেদিন আমাদের আনাড়ি হাত ধরার সাক্ষী ছিল এক ভাষার কাঙাল বোবা যন্ত্র, ক্যামেরার চোখে ধরা পড়ে গিয়ে ছিল আমাদের মৌন মুখরতা। সেখান থেকে কবে যে আমরা সেই বোবা যন্ত্রের চোখে চোখ রেখে খুঁজে পেলাম এক ‘odd venture’এর ঠিকানা, মনে পড়ে না। তবে এই টুকু জানি, যে এই পরিচিতির কয়েদখানার খপ্পরে আটকে পড়ার মাঝে শশাঙ্ক রিডেম্পশনের সাহস দেয় একমাত্র বন্ধুত্ব, ভালোবাসা । মিঠে রোদের দিন শেষ, এই কাঠফাটা রোদে একে অপরের ছায়া হয় থেকে যায় আগামী কয়েকটা দিন।’