ছবি: এই রাত তোমার আমার
পরিচালনা: পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়
অভিনয়ে: অঞ্জন দত্ত, অপর্ণা সেন
রেটিং: ৪.৬/৫
পরমব্রত চট্টোপধ্যায়ের কোন সত্ত্বা বেশি ভালো, পরিচালক নাকি অভিনেতা, ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’ আর ‘এই রাত তোমার আমার’ পরপর দেখলে এই প্রশ্ন মনে জাগতে বাধ্য। পরমব্রত পরিচালিত এই নতুন ছবি কেমন লেগেছে জানতে চাইলে প্রথমেই বলতে হয়, ভীষণ ব্যস্ত জীবনে ধীর গতির বাস্তববাদী এই গল্প যেন এক মস্ত উপহার! পরিচালকের নির্দেশনায় পর্দা জুড়ে ম্যাজিক তৈরি করেছেন অপর্ণা সেন এবং অঞ্জন দত্ত। চলুন এবার বিস্তারিত জানা যাক এই রাত তোমার আমার নিয়ে।
আরও পড়ুন: বছরের শুরুতেই ছক্কা সৃজিতের! তারকাদের ভিড়ে উজ্জ্বল পরমব্রত, কেমন হল সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই?
আরও পড়ুন: নটীর জীবনের নিপাট কোলাজ 'বিনোদিনী'! সকলকে ছাপিয়ে গেলেন রুক্মিণী
কী নিয়ে গল্প?
অমর গুপ্তের (অঞ্জন দত্ত) স্ত্রী জয়িতার (অপর্ণা সেন) ক্যানসার। চিকিৎসা চললেও তাঁর স্বাস্থ্য একেবারেই ভালো নেই। এদিকে অমর এবং তাঁর ছেলে জয়ের (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) বিশেষ সদ্ভাব নেই। তিনি চান একাই তাঁর স্ত্রীর দেখাশোনা করতে। তাই কলকাতায় না থেকে বা ছেলের কাছে লন্ডনে না গিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে তিনি চলে যান তাঁদের উত্তরবঙ্গের বাড়িতে। সেখানে তাঁরা তাঁদের সুবর্ণ জয়ন্তী বিবাহবার্ষিকী কীভাবে উদযাপন করেন, কী কী ঘটে তারপর, জীবনের কোন অপ্রকাশিত কথা প্রকাশ্যে আসে সেটা নিয়েই এই ছবি।
কেমন লাগল এই রাত তোমার আমার?
একসঙ্গে ৫০ টা বসন্ত পার করার পর সম্পর্কের রসায়ন কতটা বদলায়, কতটাই বা টান থাকে, সংসার আসলে কি ভালোবেসে একসঙ্গে থাকা নাকি স্রেফ অভ্যাস এই সমস্ত প্রশ্নগুলোর সহজ উত্তর ছবির মাধ্যমে দিলেন পরিচালক। ছবির গতি খানিক ধীর হলেও কখনও একঘেয়ে মনে হয়নি। বরং স্ক্রিপ্ট যে একেবারে মেদহীন ঝরঝরে সেটা বলা যায়।
ছবিতে যেখানে তুমি রবে নীরবে শোনা যায় অঞ্জন দত্তের গলায় তখন অজান্তেই ভিজে যায় চোখের কোণ। শুধু এই গান কেন, ছবিতে ব্যবহৃত প্রতিটি গান যেন খাপে খাপ। আধো আলো আধো অন্ধকারে দুই অভিনেতার মিষ্টি মুহূর্ত যেন মনে হতে থাকে থমকে যাক। কোনও কোনও দৃশ্যে অঞ্জন দত্তের থেকে যেমন চোখ ফেরানো যায়নি, তেমনি কোনও কোনও দৃশ্য আবার দখল করে ছিলেন অপর্ণা সেন।
কেবল স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক নয়। বাবা ছেলের সর্ম্পকের রসায়ন, জেনারেশন গ্যাপ, অভিমান সবটাই সমান্তরাল ভাবে পরিচালক তুলে ধরেছেন গল্পে। যাঁদের বাড়িতে অসুস্থ বাবা মা আছেন তাঁদের ছবির প্রতিটা ফ্রেমের সঙ্গে মিল পাবেন। পেতে বাধ্য। আবেগের আতিশয্য নেই যেমন ছবিতে তেমন শেষ দৃশ্য হোক বা অসুস্থ অপর্ণার স্বীকারোক্তির জায়গাটি কিংবা স্ত্রীর সত্য জানার পর অঞ্জনের অভিনয় চোখের জল আনবেই।
ফলে বাঙালির প্রেম দিবস বলুন বা ভ্যালেন্টাইন্স ডে দুটোর আগেই পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় যে একটা অন্যরকমের অথচ নিপাট সুন্দর প্রেমের গল্প উপহার দিলেন সেটা বলাই যায়। আর ও হ্যাঁ, খালি এই ছবির পরিচালনা নয়, তিনি এই ছবিতে অল্প দৃশ্যে হলেও অভিনয়েও নজর কেড়েছেন।