'রেনবো জেলি'র পর ফিরছে ‘ঘোতন’, ‘পপিন্স’রা এবার তাঁদের হাতে পক্ষীরাজের ডিম। যেখানে বিজ্ঞানীর চরিত্রে দেখা মিলবে অনির্বাণ ভট্টাচার্যের। তবে এই পক্ষীরাজের ডিম'-এর ম্যাজিক দর্শকদের সামনে আসার আগেই হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে মজার আড্ডায় মেতে উঠেছিল পর্দার 'ঘোতন' মহাব্রত বসু আর 'পপিন্স' অনুমেঘা বন্দ্যোপাধ্যায়।
'রেনবো জেলি'র পর ফের পরিচালক সৌকর্য ঘোষালের সঙ্গে ‘পক্ষীরাজের ডিম’ হাতে হাজির হয়ে ঠিক কেমন লাগছে তাঁদের? প্রশ্ন শুনেই পর্দার 'ঘোতন' মহাব্রত বলে ওঠে, ‘বেশ ভালোই। তবে একটু অন্যরকম তো লাগবেই, বড় হয়ে গিয়েছি অনেকটাই, কিন্তু আমাদের মধ্যে তো আত্মীয়তার সম্পর্ক, মাঝে মাঝেই কথা হত। মাঝে মাঝে আমি সৌকর্যদার বাড়িও যেতাম। নানা গল্প হত, ফলে সেই বিষয়টা এখনও রয়ে গিয়েছে আমাদের মধ্যে।’ অন্যদিকে, অনুমেঘার কথায়, ‘দাদার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সব সময়ই একটা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ পাই। কোনও সমস্যা হলেই আমরা সব সময় দাদার কাছে যাই। আর সেখান থেকেই একটা চটজলদি সমাধান পেয়ে যাই। তবে রেনবো জেলির সময় আমরা খুবই ছোট ছিলাম। সেই জায়গা থেকে এখন খানিক পার্থক্য অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু সবটা মিলিয়ে খুব ভালো একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে।’
তবে 'রেনবো জেলি'র আগে একটা বড় ওয়ার্কশপ চলেছিল এখন তো ‘ঘোতন’, ‘পপিন্স’রা বড় হয়ে গিয়েছে এখনও কি ওয়ার্কশপের প্রয়োজন হয় তাদের? প্রশ্নে মহাব্রত জানায়, এক্ষেত্রেও ওয়ার্কশপ হয়েছে। প্রায় ৩ থেকে ৪ মাসের একটা ওয়ার্কশপের মধ্যে দিয়ে তাদের যেতে হয়েছে। আসলে মহাব্রতরা মনে করে বয়স নির্ভর করে না, ওয়ার্কশপ সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি কাজের ক্ষেত্রে অনেকখানি বাড়িত সুবিধা পাওয়া যায় এই ওয়ার্কশপের মাধ্যমে।
তাদের মুখ থেকে এই কথা শোনার পর খুব স্বাভাবিক ভাবেই কৌতুহল হয় যে কীভাবে তাঁরা করত এই ওয়ার্কশপ? এই কথায় সাবলীল ছন্দেই 'ঘোতন' থুড়ি মহাব্রত বলে, ‘ওয়ার্কশপ অনুভূতিটা খুব অন্যরকমের। এটা করতে গিয়ে অনেকটা চর্চা তো হয়েছেই পাশাপাশি আমরা খুব আনন্দও পেয়েছি। ওয়ার্কশপ করার ফলে কাজ করতে গিয়ে একবারও মনে হয়নি যে, কাজটা নতুন নতুন শুরু হয়েছে। মনে হয়েছে এটাই তো করে আসছি দীর্ঘদিন ধরে।’
তবে এই অনুশীলনের কথা মনে করলেই সবার আগে মাথায় আসে অঙ্কের কথা আর অঙ্কের সঙ্গে 'ঘোতন'-এর আবার খুব একটা সখ্যতা নেই, কারণ ‘ঘোতন অঙ্কে জিরো’। বলা ভালো অঙ্কে তার বেশ ভয় রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে অনুমেঘা আর মহাব্রত কি অঙ্কে ভয় পায়? প্রশ্নে বেশ গম্ভীর মুখে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মহাব্রত বলা শুরু করে, ‘হ্যাঁ মানে, অঙ্কে তো একটা ভয় কাজ করেই। তবে আমার ক্ষেত্রে ওই ভুল হবে বা কীভাবে করব এমন ভয় ঠিক নেই।’ তবে, কেমন ভয় পায় 'ঘোতন' না না মানে মহাব্রত? সে বলে, ‘আমি ঠিক বুঝতে পারতাম না কোথা থেকে করব। মানে আমাকে একটা অঙ্ক যখন করতে দেওয়া হত, তখন বুঝতে পারতাম না কোথা থেকে কীভাবে শুরু করব, আমি কেবল কতগুলো সংখ্যা দেখতাম। আর সেখান থেকেই আমার অঙ্কে ভয়টা শুরু হয়।’
তবে এক্ষেত্রে অনুমেঘা কিন্তু একেবারে বিপরীত। সে রীতিমতো বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। তার কথায়, ‘অঙ্ককে আমি যতটা ভয় পাই, ততটা ভালোওবাসি। কারণ আমি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী।’
এই গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেকখানি বিজ্ঞান, সঙ্গে আছে কল্পনাও। এখন মহাব্রত অনুমেঘা অনেকটাই বড় হয়েছে। জীবনে ব্যস্ততা এসেছে। কিন্তু তার মাঝেও কি মনের কোনও গোপন কোণে এখনও রূপকথা তার গল্পের জাল বোনে? অনুমেঘার কথায়, ‘সব সময় যে রূপকথা জাল বোনে তেমনটা নয়। তবে এই ছবির চিত্রনাট্যটা প্রথম পড়ে একটা অদ্ভুত ভাব তৈরি হয়। তাছাড়া আমার বিষয় যেহেতু বিজ্ঞান তাই রূপকথা-বিজ্ঞান যেন অনেকাংশের আমার মনের মধ্যে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।’
তবে মহাব্রত মতে গোটা জগতেই রূপকথার জাল পাতা। তার কথায়, ‘রূপকথা তো চারিদিকেই ঘুরছে। আসলে বাস্তব থেকেই তো রূপকথা তৈরি হয়। আমাদের আশেপাশে রাজা-রাণী-রাজকন্যা আছে। শুধু আমাদের খুঁজে নিতে হবে।’
তবে রূপকথা, বিজ্ঞানের মাঝেও যা ভাবায় তা হল কেরিয়ার। অনুমেঘা আর মহাব্রত কেরিয়ার নিয়ে কী ভাবে? এই অভিনয়কে সম্বল করেই কি তারা ভবিষতে এগিয়ে যেতে চায়? প্রশ্নে অনুমেঘা বলে, ‘সামনেই আমার দ্বাদশ শ্রেণীর ফাইলান পরীক্ষা মানে বোর্ডস এক্সাম, তাই পড়াশোনার দিকেই এখন বেশি মনোযোগ দিতে হচ্ছে। তারপর এই দিকটা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করব।’ অন্যদিকে মহাব্রত জানায়, অভিনয় নিয়েই তার এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।
তবে ভবিষৎ পরিকল্পনা এখন থাক। তার থেকে বরং ফের ‘পক্ষীরাজের ডিম’ হাতে মানুষের মনে কথা শোনা যাক। অনুমেঘা আর মহাব্রত যদি হাতে পক্ষীরাজের ডিম হাতে পায় কার মনের কথা পড়ে দেখতে চাইবে? প্রশ্নে মহাব্রত জানায় সে আগে আয়নার সামনে ওই ডিম হাতে দাঁড়াবে। তাঁর কথায়, 'আমি আগে নিজের মধ্যে লুকে থাকা অনুভূতি গুলোকে দেখতাম।' অন্যদিকে অনুমেঘা বলে, 'ওটা দিয়ে মানুষ চেনা যায়। কেউ আমার সঙ্গে কথা বলছে, আর সে তখন আসলে আমার বিষয় কী ভাবছে সেটা দেখে নিতে পারব। আমি সেইভাবে ব্যবহার করতাম।'
আর অভিনেতা অনির্বাণ তাঁকে নিয়ে মহাব্রত অনুমেঘারা কীভাবে? তাঁর সঙ্গে কাজের অনুভূতি কেমন? পর্দায় অনির্বাণ প্রথম সারির অভিনেতা হলেও মহাব্রত-অনুমেঘাদের কাছে প্রিয় অনির্বাণদা, যার সঙ্গে খুব সহজেই মিলেমিশে আনন্দ করে কাজ করা যায়। মহাব্রতর কথায়, ‘অনির্বাণদার সঙ্গে অভিনয় করে কখনও আন-কমফোর্টেবল ফিল হয়নি। ওঁর সঙ্গে আমারা শ্যুটিংয়ের বাইরে ফাঁকা সময় অনেক গল্প করেছি। ’ অনুমেঘা জানায়, অনির্বাণদা খুবই ফ্রেন্ডলি। ওঁর সঙ্গে কাজ করেও খুব ভালো লাগে।'