দমদম লোকসভা কেন্দ্রটি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি লোকসভা কেন্দ্র। ১৯৭৭ সালে প্রথম এই লোকসভা কেন্দ্রটি আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে এটি তফশিলি জাতি বা উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত নয়। মোট সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে এই লোকসভা কেন্দ্রটি গঠিত। সাতটি বিধান কেন্দ্র হল - খড়দহ বিধানসভা কেন্দ্র, দমদম উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র, পানিহাটি বিধানসভা কেন্দ্র, কামারহাটি বিধানসভা কেন্দ্র, বরানগর বিধানসভা কেন্দ্র, দমদম বিধানসভা কেন্দ্র ও রাজারহাট গোপালপুর বিধানসভা কেন্দ্র। লোকসভা আসনটিতে ঐতিহাসিকভাবে সিপিআইএম সব চেয়ে বেশিবার জয়ী হলেও বর্তমানে এই আসনটি টিএমসির প্রার্থী সৌগত রায়ের দখলে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রটিতে মোট ভোটদাতা ছিলেন ১৪ লক্ষ ৫ হাজার ৯৮১ জন।
১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে দমদম কেন্দ্রটিতে জয়ী হয়েছিল ভারতীয় লোক দলের পক্ষ থেকে অশোক কৃষ্ণ দত্ত। তিনি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে পাঁচ শতাংশ বেশি ভোট পেয়েছিলেন৷ ১৯৮০ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য জুড়ে সিপিআইএম ২৮ টি কেন্দ্রে জয়ী হয়। দমদম কেন্দ্র থেকে সিপিআইএমের নীরেন ঘোষ ১ লক্ষ ৬৫ হাজারের বেশি ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেন। ১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দমদম আসনটিতে ফের জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আশুতোষ ল জয়যুক্ত হন। ভোটের ব্যবধান ছিল মাত্র ২০ হাজার ৭০০। ১৯৮৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই আসনটি জাতীয় কংগ্রেসের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় সিপিআইএম। অমল দত্ত ৪৩,০০০-এর কাছাকাছি ভোটে জয়ী হন এই কেন্দ্র থেকে। ১৯৯১ সালের লোকসভা নির্বাচনে নির্মল কান্তি চ্যাটার্জি সিপিআইএমের পক্ষ থেকে এক লক্ষ চার হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হন। ১৯৯৬ সালের লোকসভা ভোটে নির্মলকান্তি চ্যাটার্জি এই আসন থেকে জয়ী হয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন।
১৯৯৮ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই আসনটি যায় ভারতীয় জনতা পার্টির হাতে। তপন শিকদার এই কেন্দ্রটি থেকে ১ লক্ষ ৩৭ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হন। ১৯৯৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আসনটি ধরে রাখে ভারতীয় জনতা পার্টি তবে। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিপিআইএমের অমিতাভ নন্দী নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে ৯৮ হাজার ভোটে পরাজিত করে জয়যুক্ত হন। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে দমদম কেন্দ্রটিতে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সৌগত রায় জয়ী হন প্রথম বারের জন্য। ২০১৪ এবং ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রটি তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য নেতা সৌগত রায়ের হাতেই থাকে। ২০১৪ সালে এই আসনটিতে ভোটদানের হার ৮০ শতাংশ থাকলেও ২০১৯ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৭১ শতাংশে।
এবারও তৃণমূলের হয়ে দাঁড়িয়েছেন সৌগত রায়। বিজেপির ভরসা একদা তৃণমূলে থাকা নেতা শীলভদ্র দত্ত। অন্যদিকে সিপিএমের হয়ে আছেন বর্ষীয়ান সুজন চক্রবর্তী। ফলে তিন প্রবীণের এই লড়াই যে রীতিমত জমজমাট তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখানে তিন দলেরই ভিত্তি আছে। তবে তৃণমূল বিরোধী ভোট যদি ভাগ হয়, তাহলে সৌগত কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবেন। বিভিন্ন সময় দলের লাইনের থেকে কিছুটা ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন এই বর্ষীয়ান নেতা। তবে শেষ বিচারে মমতার পুরো আস্থা আছে তাঁর ওপর। ফলে দলের কর্মীরা সাধ্যমত লড়ছেন। আগামী ১ জুন লোকসভার সপ্তম দফায় এখানে ভোটগ্রহণ হবে।
এবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক দমদম লোকসভা কেন্দ্রে অন্তর্গত বিধানসভা কেন্দ্র গুলির ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভার ফলাফল। খড়দা বিধানসভা আসনটিতে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কাজল সিনহা ২৮ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হন। উত্তর দমদম বিধানসভায় চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জয়ী হন। পানিহাটি বিধানসভা আসনটি তো জয়ী হন তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে নির্মল ঘোষ। কামারহাটি এবং বরানগর আসন দুটিতে যথাক্রমে মদন মিত্র এবং তাপস রায় জয়ী হোন ২৪ শতাংশ এবং ২২ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে। দমদম আসনটিতে রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ২০২১ সালের বিধানসভায় ২৬ হাজারের কিছু বেশি ভোটে জয়ী হন। রাজারহাট গোপালপুর বিধানসভা কেন্দ্রে অদিতি মুন্সি তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ২৫ হাজারের বেশি ভোটে জয়যুক্ত হন। সামগ্রিকভাবে লোকসভা এবং বিধানসভার ভোটের নিরিখে এই কেন্দ্রটিতে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একচ্ছত্র আধিপত্যই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এবার লোকসভায় সেই ট্রেন্ড বজায় থাকে কিনা জানার।