দিল্লিতে ‘বর্বরতার’ জন্য নির্বাচন কমিশনকে দুষলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার রাতে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে সাক্ষাতের পরে রাজভবনের বাইরে দাঁড়িয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন, দিল্লিতে যেভাবে মহিলা সাংসদ-সহ তৃণমূল নেতাদের যেভাবে টেনেহিঁচড়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাতে গণতন্ত্রের হত্যা করা হয়েছে। সেই হত্যার মূল কারিগর হল ‘বিজেপির হাতের পুতুল’ ভারতের নির্বাচন কমিশন। কেন সেই ঘটনার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা বিজেপিকে দোষারোপ করছেন না, সেটাও ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তাঁর দাবি, এখন কমিশনের হাতে প্রশাসনিক ক্ষমতা আছে। সেইসঙ্গে অভিষেক এটাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে ‘ভারতীয় জনতা পার্টির কাছে বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।’
ঠিক কী হয়েছিল দিল্লিতে?
জলপাইগুড়িতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি তৈরির অনুমোদন দেওয়ার আর্জি জানিয়ে এবং কেন্দ্রীয় এজেন্সির অপব্যবহারের অভিযোগে সোমবার দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে যায় তৃণমূলের ১০ জনের একটি প্রতিনিধি দল। দেখা করেছে কমিশনের ফুলবেঞ্চের সঙ্গে। সেই সাক্ষাতের পরে কমিশনের অফিসের সামনে ২৪ ঘণ্টার ধরনায় বসেন তৃণমূল নেতারা। তাঁদের সরে যেতে বলেন দিল্লি পুলিশের আধিকারিকরা। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেননি তৃণমূল নেতারা। তারপর তাঁদের টেনেহিঁচড়ে বাসে তোলা হয়। সাংসদ সাগরিকা ঘোষের চুল টেনে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল।
রাজভবন ‘অভিযানে’ অভিষেক
সেই ঘটনার পরই অভিষেকের নেতৃত্বে তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল রাজভবনে যায়। রাত ন'টায় সময় দেন রাজ্যপাল। ১০ মিনিট আগেই রাজভবনে বেরিয়ে যান। প্রায় ৪৫ মিনিট পরে রাজভবন থেকে বেরিয়ে এসে কমিশনের বিরুদ্ধে তুমুল আক্রমণ শানান অভিষেক। তিনি অভিযোগ করেছেন যে মুখ্য নির্বাচনী কমিশনারকে নিয়োগ করেছে বিজেপি। তাই তিনি চান না যে মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছে দিক তৃণমূল সরকার।
সেইসঙ্গে অভিষেক দাবি করেন, আদর্শ আচরণবিধি কার্যকর থাকার সময় জাতীয় সংস্থাকারী সংস্থার (এনআইএ) এসপি ধনরাম সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি। সেটার প্রমাণ আছে। তারপর কেন জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার অধিকর্তাকে সরিয়ে দেবে না কমিশন? অথচ এই কমিশনই তো বিজেপির কয়েকজনের অভিযোগ পেয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দু'বার রাজ্য পুলিশের ডিজি পালটে দিতে পারে। আবার জেলাশাসক পালটেও দিতে পারে বলে দাবি করেছেন অভিষেক।
অভিষেকের বক্তব্য, ‘যাঁরা বিজেপির তল্পিবাহক হয়ে কাজ করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেবে না কমিশন? আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করছি না।’ তবে বিজেপিকেও তোপ দেগেছেন অভিষেক। তাঁর দাবি, ভোটের সময় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে (ইডি) ব্যবহার করছে বিজেপি। কিন্তু এনআইএ বা ইডি তো ভোটের ময়দানে লড়বে না।
রাজ্যপালকে ‘ডেডলাইন’ অভিষেকের
অভিষেক জানান, তাঁরা যে দাবি তুলেছেন, সেটার সঙ্গে একমত হয়েছেন রাজ্যপাল। মঙ্গলবারই বিষয়টি কমিশনের কাছে উত্থাপন করবেন বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন অভিষেক। তিনি আরও জানিয়েছেন, ওই সময়ের মধ্যে রাজ্যপাল যদি কোনও সদর্থক ভূমিকা পালন না করেন, তাহলে ফের মঙ্গলবার রাজভবনে আসবেন। তারপরই পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা করা হবে। সেইসঙ্গে অভিষেক স্মরণ করিয়ে দেন যে রাজ্যপালেরও ‘বাধ্যবধকতা’ আছে।
আরও পড়ুন: Tea Garden: ৬০ হাজার টাকার ম্যাজিক! ঘুরছে চা বলয়ে ভোটের হাওয়া? নয়া খেলা উত্তরবঙ্গে