বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রটি পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি লোকসভা কেন্দ্র। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় অবস্থিত এই লোকসভা কেন্দ্রটি ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই কেন্দ্রটি থেকে অভিনেত্রী নুসরত জাহান সাংসদ হিসাবে রয়েছেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরিসংখ্যান বলছে, ১৪ লক্ষ ৯০ হাজার ৫৯৬ জন এই ভোটে অংশগ্রহণ করেছিল। এই আসনটি বর্তমানে কোনও সংরক্ষিত তালিকায় নেই। মোট সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রটি গঠিত। এই সাতটি কেন্দ্র হল বাদুড়িয়া, হাড়োয়া, মিনাখাঁ, সন্দেশখালি, বসিরহাট উত্তর, বসিরহাট দক্ষিণ এবং হিঙ্গলগঞ্জ। এর মধ্যে মিনাখাঁ এবং হিঙ্গলগঞ্জ এই দুটি আসন তফশিলি জাতিদের জন্য সংরক্ষিত এবং সন্দেশখালি আসনটি তফশিলি উপজাতির প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত।
সন্দেশখালি এই বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যেই পড়ে। গত জানুয়ারি থেকে যে জায়গাটা শিরোনামে উঠে এসেছে। সেখানে শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষণের অভিযোগও উঠেছে। যদিও পরবর্তীতে কয়েকটি স্টিং ভিডিয়ো (সত্যতা যাচাই করেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা) ভাইরাল হয়েছে। তাতে দাবি করা হয়েছে যে সন্দেশখালিতে ভুয়ো ধর্ষণের মামলা করানো হয়েছে। নেপথ্যে ছিলেন বিজেপি নেতারা। যদিও তাঁরা সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারইমধ্যে বসিরহাটে শনিবার ভোটগ্রহণ। বসিরহাটে এবার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হলেন হাজি নুরুল ইসলাম। বিজেপির প্রার্থী হলেন সন্দেশখালির গৃহবধূ রেখা পাত্র। সিপিআইএমের প্রার্থী হলেন নিরাপদ সর্দার।
১৯৫২ সালের লোকসভা নির্বাচনে বসিরহাট কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেছিলেন কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়ার রেণু চক্রবর্তী৷ ১৯৫৭ নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেস পরেশনাথ কয়ালে এই কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেছিলেন। ১৯৬২ সালের লোকসভায় জাতীয় কংগ্রেসের হুমায়ুন কবীর এই আসন থেকে জয়লাভ করেছিলেন। ১৯৬৭ সালে বাংলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই আসনটিতে ফের হুমায়ুন কবীর জয়যুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের লোকসভা নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেসের একেএম ইশাক ১৭ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় লোক দলের একে হান্নান ১২ হাজারের বেশি ভোটে জয়যুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৮০ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রটি থেকে জয়ী হয়েছিলেন কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া’র প্রার্থী ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত। ১৯৮৪ সালে নির্বাচনে ফের জয়যুক্ত হয়েছিলেন ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত।
১৯৮৯ সালের নির্বাচনে মনোরঞ্জন সূর সিপিআই-এর পক্ষ থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্রটি থেকে সিপিআই-এর পক্ষ থেকে মনোরঞ্জন শূর ফের সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৯৬, ১৯৯৮, ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনগুলিতে অজয় চক্রবর্তী সিপিআই-এর পক্ষ থেকে এই কেন্দ্রে লাগাত জয়ী হয়েছিলেন। ২০০৯ সালে ঘটে ছন্দপতন, শেখ নুরুল ইসলাম তৃণমূলের কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই কেন্দ্রে জয়ী হন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে ৬০ হাজারের কিছু বেশি ভোটে হারিয়ে৷ ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ইদ্রিশ আলি তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিনের সিপিআই-এর শক্ত ঘাঁটিতে জয়ী হন। সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে অভিনেত্রী নুসরত জাহান এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ৩ লক্ষ ৫০ হাজারের বেশি ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোটদারের হার ছিল ৭৮ শতাংশ৷
আসুন জেনে নেওয়া যাক, এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে ২০২১ সালের ফলাফল সম্পর্কে। ২০২১ সালের বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেস দক্ষিণবঙ্গে তাদের হারানো জনসমর্থন অনেকটাই ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়। বাদুড়িয়া বিধানসভা কেন্দ্রটি থেকে আবদুর রহিম কাজি তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জয়লাভ করেন। মিনাখাঁ এবং সন্দেশখালিতেও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা কোথাও ১৯ শতাংশ কোথাও ২৫ শতাংশ ভোটের মার্জিনে জয়যুক্ত হন। হাড়োয়া কেন্দ্রটিতে ইসলাম শেখ নুরুল জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। মিনাখাঁ কেন্দ্রটিতে ২০২১ সালের বিধানসভায় ঊষসী রাণি মন্ডল জয়যুক্ত তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। বসিরহাট উত্তর এবং বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্র দুটিও রাজ্যের শাসক দল তাদের দখলে রাখে। এছাড়া হিঙ্গলগঞ্জ আসনটিও তাদের দখলে রাখে তৃণমূল কংগ্রেস।