কলকাতা হাইকোর্টে এই প্রথমবার দেখা গিয়েছে, সিঙ্গল বেঞ্চের সঙ্গে সরাসরি ডিভিশন বেঞ্চের সংঘাত। তাতে আবার হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে সুপ্রিম কোর্টকে। এই নিয়ে গোটা দেশ তোলপাড় হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টে এমন নজিরবিহীন পরিস্থিতি নিয়ে এবার মুখ খুললেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এমন নজিরবিহীন পরিস্থিতি নেই বলে মত তাঁর। এমনকী এই পরিস্থিতির জন্য তিনি আঙুল তুলেছেন বিজেপির দিকে। একইসঙ্গে প্রশ্ন তুললেন আদালতের ভূমিকা নিয়েও।
এদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই মন্তব্য করতেই তার কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। আর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সোমবার নিজের মতপ্রকাশ করেন অভিষেক। আর তখনই কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির মধ্যে সংঘাত নিয়ে অভিষেক বলেন, ‘বিচারপতি বনাম বিচারপতি। স্বাধীন দেশে এই পরিস্থিতি আগে কি দেখেছি আমরা? যেখানে বিচার পেতে যাই আমরা, সেখানে এমন ঘটনা ঘটতে পারে সেটা স্বপ্নেও ভাবিনি। এই সংঘাত হবে কেন? কী কারণে হচ্ছে? এটা তো বিজেপির তৈরি। আর বিজেপিকে মদত জোগানো হচ্ছে বলেই দেশের এই অবস্থা।’
অন্যদিকে আমতলায় প্রেক্ষাগৃহ উদ্বোধন করেন ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ। সেখানেই তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি যদি কুকর্ম করে থাকি এবং বিজেপিতে চলে যাই, আমার সাত খুন মাফ। কিন্তু তৃণমূল, কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, ডিএমকে বা সমাজবাদী পার্টি করলে ইডি–সিবিআই লেলিয়ে দেওয়া হবে। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, তৃণমূলে দুর্নীতিগ্রস্ত লোক আছে। ইডি–সিবিআই তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছে। কংগ্রেস, আপ, হেমন্ত সোরেন থেকে শুরু করে অন্য দলের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছে তারা। কিন্তু সব দল দুর্নীতিগ্রস্ত আর বিজেপি ধোয়া তুলসিপাতা! ওদের দলের নেতাদের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ থেকে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু বিচারব্যবস্থা কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
তবে এখানেই থেমে থাকেননি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের দলের প্রসঙ্গ টেনে অভিষেকের বক্তব্য, ‘এই পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডল বা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকরা যদি কোনও দিন জামিন পান, তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি জামিন পেলেন এবং বিজেপিতে গেলেন, দেখবেন সাত খুন মাফ হয়ে যাবে। কেউ খুন করে বিজেপিতে যোগ দিলে দেখবেন বিচারব্যবস্থা কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমি কর্মফলে বিশ্বাসী। পাপ করলে সাজা হবেই। আজ না হয় কাল। আমার অসীম ধৈর্য। পরীক্ষা নিয়ে দেখতে পারেন।’
আরও পড়ুন: ইমামের প্রাণনাশের হুমকিতে তোলপাড় দেশ, রামমন্দিরের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জের
রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভর্তির দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি সৌমেন সেনের মধ্যে সংঘাত দেখা দেয়। সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ। সেই নির্দেশকে চ্য়ালেঞ্জ জানিয়ে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে গেলে স্থগিতাদেশ মেলে। এখান থেকেই সংঘাতের সূত্রপাত। সরাসরি ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি সৌমেন সেনকে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি তকমা দেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, সুপ্রিম কোর্টকে স্বতঃপ্রণোদিত হস্তক্ষেপ করতে হয়। এই পরিস্থিতিরই সমালোচনা করেন অভিষেক।