এসএসসি মামলার রায় নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উত্তাল হয়ে আছে। চলছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন। কলকাতায় চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের উপরে লাঠিচার্জের ঘটনায় তুমুল অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে মেরেকেটে এক বছর আগে চাকরিহারাদের ক্ষোভ সামলাতে গিয়ে রীতিমতো ব্যাকফুটে পড়ে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার। তারইমধ্যে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের একটি ফেসবুক পোস্ট নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বুধবার রাত ১০ টা ৪৮ মিনিটে একটি স্ক্রিনশট পোস্ট করে তৃণমূল নেতা বলেন, ‘এটা যদি সত্যিই এই ব্যক্তির বক্তব্য হয় এবং তিনি যদি ক্ষমা চেয়ে ডিলিট না করেন, তাহলে ইনি যে পদেই থেকে থাকুন, বাংলায় পা রেখেছেন খবর পেলে সামনে গিয়ে ……………।’
কোন ফেসবুক পোস্ট নিয়ে অসন্তোষ কুণালের?
আর কুণাল যে স্ক্রিনশট পোস্ট করেন, তাতে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মার্কন্ডেয় কাটজুর নাম ছিল। বুধবার সন্ধ্যায় ৭ টা ৫৮ মিনিটে প্রাক্তন বিচারপতির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে ভেসে ওঠা সেই পোস্টে বলা হয়েছে, ‘মমতা ব্যানার্জির জন্য কেন একজন ভালো স্বামী খুঁজে পান না বাঙালিরা?’
এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত প্রাক্তন বিচারপতির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সেই পোস্ট আছে। ওই পোস্ট মুছে ফেলা হয়নি। বরং ওই পোস্টের কয়েকটি কমেন্টে উত্তর দেওয়া হয়েছে। সেই কমেন্ট বক্সে অনেকেই কুণালের মতো প্রাক্তন বিচারপতির মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন। যে কুণাল নিজে বুধবার রাতের পর থেকে ওই বিষয়টি নিয়ে আর কোনও মন্তব্য করেননি।
চাকরিহারাদের উপরে লাঠিচার্জের ঘটনার মধ্যে মিডিয়াকে দুষলেন কুণাল
সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতিকে নিয়ে পোস্টের পরে কুণাল শুধুমাত্র কলকাতায় চাকরিহারাদের উপরে লাঠিচার্জের ঘটনা নিয়ে নিজের ফেসবুকে মুখ খুলেছেন। একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে তিনি লেখেন, 'শিক্ষকদের উপর পুলিশ বাধ্য হয়ে অ্যাকশন নিলে খারাপ। আর অধ্যাপককে বাম-রাম ছাত্ররা লাথি মারলে ভালো!! চ্যানেলগুলো এই ফুটেজটা একটু চালিয়ে তুলনা করলে ভালো হয়। নাকি এগুলো সময়মতো লাইব্রেরি থেকে আসে না?'
আরও পড়ুন: সরকারি সম্পত্তি নষ্টের চেষ্টা ও পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে, কসবাকাণ্ডে সাফাই পন্থের
আসলে বুধবার কলকাতায় যে চাকরিহারাদের উপরে লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেছে, সেটা হয়েছে কসবায় স্কুল পরিদর্শক (ডিআই) অফিসের সামনে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) নিয়োগ প্রক্রিয়ার (যে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত) মাধ্যমে চাকরি পাওয়া প্রায় ২৬,০০০ জনের চাকরি চলে যাওয়ার পরে বুধবার রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ডিআই অফিস অভিযান করেন চাকরিহারাদের একাংশ।
আরও পড়ুন: HT Bangla Exclusive: 'চাকরিচ্যুতদের কাজ চালিয়ে যেতে দিলে রাজ্যের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করব'
চাকরিহারাদের কসবা অভিযান ও পুলিশের লাঠিচার্জ
একইভাবে কসবায় জমায়েত হন অনেকে। তাঁদের ঠেকাতে ব্যারিকেড বসানো হয় গেটে লাগানো হয় তালা। বিক্ষোভকারীদের বোঝানোরও চেষ্টা করে পুলিশ। তবে তাতে কাজ হয়নি। তালা ভেঙে বিক্ষোভকারীরা ঢুকে পড়েন দফতরের ভিতরে। তাঁরা দাবি করেন, ডিআইয়ের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি তুলে দেবেন। যদিও অফিসে ছিলেন না ডিআই। তারইমধ্যে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। তা নিয়ে তুমুল অসন্তোষ ছড়ায়।
পরবর্তীতে বুধবার বিকেলের দিকে কলকাতা পুলিশের তরফে দাবি করা হয়, ‘কসবা ডিআই অফিসের বাইরে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রেক্ষিতে স্পষ্টভাবে জানানো হচ্ছে যে প্রথমে একদল বিক্ষুব্ধ জনতা, বিনা উস্কানিতে পুলিশকর্মীদের উপর হামলা চালায় এবং হিংসাত্মক আচরণ করে, যাঁর মধ্যে মহিলা পুলিশকর্মীরাও ছিলেন। চারজন পুরুষ পুলিশকর্মী এবং দুইজন মহিলা পুলিশকর্মী আহত হয়ে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং আরও ক্ষয়ক্ষতি ও আহতের ঘটনা রোধ করতে পুলিশ বাধ্য হয়ে হালকা বলপ্রয়োগ করে। এই ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে।’