গঙ্গা দশেরার সঙ্গে মনসা পুজোর একটা যোগ রয়েছে। দশহরার দিন অনেক জায়গায় মনসা পুজো হয়। কেন এই দিন মনসা পুজো হয়, এর পিছনে রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনি। দশহরা শব্দটা এসেছে দশ যুক্ত অহ থেকে। এই অহ শব্দের প্রকৃত অর্থ হলো দিন। এটি একটি সংস্কৃত শব্দ।
দেবী দুর্গা যখন মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন সেটা ছিল আশ্বিন মাসে দেবীপক্ষের দশম দিন। আবার ওই দশমী তিথিতেই শ্রীরামচন্দ্র রাবণকে যুদ্ধে হারিয়ে মা সীতাকে উদ্ধার করেছিলেন। রাবণ কিন্তু দশমাথা যুক্ত ছিল তাই তার নাম ছিল দশানন। দশ মানে দশানন রাবণ আর হরা অর্থে এখানে হেরে যাওয়া কে বোঝানো হয়েছে।
শাস্ত্রমতে দশহরায় গঙ্গা পুজো হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্ল দশমী তিথিতে গঙ্গা পুজোর বিশেষ নিয়ম রয়েছে। এই দিন ১০ রকম পাপের বিনাশ ঘটে গঙ্গাস্নান করলে। পুরাণ মতে এই দিনই ভগীরথ মহাদেবের জটা থেকে মর্ত্যে মা গঙ্গাকে নিয়ে এসেছিলেন। মা গঙ্গা আমাদের আরাধ্যা দেবী। আষাঢ় মাসে বর্ষাকাল শুরু হয়। তার ঠিক আগেই হয় এই পুজো।
জ্যৈষ্ঠ শুক্ল দশমীতে এই গঙ্গা দশেরা উৎসব পালিত হয়। কিন্তু দশহারার সঙ্গে রয়েছে দেবী মনসারও সম্পর্ক। মা মনসা হলেন বাংলার লৌকিক দেবী। মনসামঙ্গল অনুসারে তিনি ভগবান শিবের মানস কন্যা এবং নাগরাজ বাসুকির ভগিনী। বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় মনসা পুজো অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু জ্যৈষ্ঠ মাসের দশহরার দিনে মা মনসার বছরের প্রথম স্নানযাত্রা শুরু হয়। বর্ষার আগে সাপের উৎপাত খুব বেড়ে যায়। মনে করা হয় এই দিন থেকেই সর্বকূলের বাড় বাড়ন্ত হয়। তাই এই দশহারার দিন মা মনসা কে পুজো করে সন্তুষ্ট করা হয়।
এই বাংলায় একসময় সেন রাজাদের রাজত্ব ছিল। সেন রাজাদের রাজধানী ছিল নদীয়া জেলার নবদ্বীপে যা ছিল সামাজিক বাণিজ্যিক ধর্মীয় মেলবন্ধনের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল তখন। সেই সময় দশহরা তিথিতে নবদ্বীপে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে গঙ্গা পুজো করা হতো। বড় বড় বাণিজ্যতরী নিয়ে বণিকেরা নবদ্বীপের ঘাটে আসতো। সেই নৌকাতে মূর্তি গড়ে মা গঙ্গার বিশেষ পুজো হতো।
সকাল থেকে জমজমাট মেলার আয়োজন হত। সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলত দান ধ্যান ও খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন। মনে করা হয় সেন রাজাদের আমল থেকে দশহরা অর্থাৎ এই জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্ল পক্ষের দশমী তিথিতে বাংলায় প্রথম গঙ্গা দশেরার পুজো শুরু হয়েছিল।